Home Bengali সূরা ১০৮: আল-কাউসার

সূরা ১০৮: আল-কাউসার

0

সূরা ১০৮: আল-কাউসার (অসীম কল্যাণ)-এর প্রেরণাদায়ক বার্তা অনুভব করুন—এটি আশা ও কৃতজ্ঞতার এক কুরআনিক অধ্যায়, যা বিশ্বাসীদের আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহ এবং আন্তরিক উপাসনার শক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

আল-কাউসার

সূরা ১০৮: আল-কাউসার (প্রচুর কল্যাণ)

ভূমিকা

সূরা আল-কাউসার কুরআনের সবচেয়ে ছোট সূরাগুলোর একটি হলেও এর অন্তর্নিহিত বার্তা অসীম গভীর। এটি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি আল্লাহর অপরিসীম অনুগ্রহ ও সান্ত্বনার বার্তা বহন করে। মক্কার কাফেররা তাঁকে বিদ্রূপ করত, বলত যে তাঁর কোনো উত্তরাধিকারী নেই, তাই তাঁর নাম মুছে যাবে। কিন্তু আল্লাহ এই সূরায় ঘোষণা করেন যে তিনি নবীকে “আল-কাউসার” — অর্থাৎ বিপুল কল্যাণ ও অফুরন্ত আশীর্বাদ দান করেছেন। এখানে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে একমাত্র আল্লাহর জন্য নামাজ ও কোরবানি করার, এবং জানানো হয়েছে যে যারা নবীর শত্রু, তারাই প্রকৃত অর্থে ‘অবতারিত’ বা নিশ্চিহ্ন হবে।

সূরা আল-কাউসার: পাঠ্যাংশ

পরম করুণাময়, অতিশয় দয়ালু আল্লাহর নামে।

(১) নিশ্চয়ই আমরা তোমাকে দিয়েছি আল-কাউসার (অগণিত কল্যাণ)।

(২) অতএব, তোমার প্রভুর উদ্দেশে নামাজ আদায় করো এবং কোরবানি করো।

(৩) নিশ্চয়ই তোমার শত্রুই নিঃসন্তান ও নিশ্চিহ্ন।

You May Like: সূরা ১০৩: আল-আসর (সময়ের শপথ)

ব্যাখ্যা

সূরা আল-কাউসার নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি আল্লাহর সান্ত্বনার ঘোষণা। যখন নবীর পুত্রগণ অল্প বয়সেই মৃত্যুবরণ করেন, তখন কাফেররা তাঁকে “অবতারিত” বা “উত্তরাধিকারবিহীন” বলে অপমান করেছিল। এই সূরায় আল্লাহ জানান যে, নবী (সা.) প্রকৃতপক্ষে বিশ্বের জন্য কল্যাণের উৎস—তিনি পেয়েছেন “আল-কাউসার”, যা একদিকে জান্নাতের এক মহাস্রোত, আবার অন্যদিকে পৃথিবীতে তাঁর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া জ্ঞানের, দয়ার ও হেদায়েতের অসীম ভাণ্ডার।

এখানে নামাজ ও কোরবানির নির্দেশ আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশ। এটি বোঝায়, সমস্ত ইবাদত ও উৎসর্গ কেবল আল্লাহর জন্যই নিবেদিত হতে হবে। সূরার শেষ আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন—যারা নবীকে ঘৃণা করে, তাঁর বিরোধিতা করে, তারাই প্রকৃত অর্থে বিচ্ছিন্ন ও বিলুপ্ত হবে; ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, নবীর নাম চিরজীবী হয়েছে, কিন্তু তাঁর শত্রুরা অন্ধকারে হারিয়ে গেছে।

সূরা আল-কাউসার সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১: সূরা ১০৮ : আল-কাউসার কী বিষয়ে?
উত্তর: এটি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি আল্লাহর অসীম অনুগ্রহ ও আশীর্বাদের ঘোষণা, এবং তাঁর শত্রুদের পরিণতির ভবিষ্যদ্বাণী।

প্রশ্ন ২: “আল-কাউসার” শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: “আল-কাউসার” অর্থ প্রচুর কল্যাণ, অফুরন্ত দয়া ও বরকত। হাদীসে এটি জান্নাতে নবীর জন্য নির্ধারিত এক মহা নদী বা ঝর্ণার নাম হিসেবেও বর্ণিত হয়েছে।

প্রশ্ন ৩: সূরা আল-কাউসার থেকে আমরা কী শিক্ষা পাই?
উত্তর: এই সূরা শেখায় যে আল্লাহই প্রকৃত সম্মান ও বরকতের দাতা। কৃতজ্ঞতা প্রকাশে ইবাদত ও ত্যাগ অপরিহার্য। ঈমানদারকে সর্বদা আল্লাহর পথে ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ থাকতে হবে।

প্রশ্ন ৪: সূরা আল-কাউসারে কয়টি আয়াত রয়েছে?
উত্তর: সূরা আল-কাউসার মোট ৩টি আয়াত নিয়ে গঠিত, যা সংক্ষিপ্ত হলেও তাৎপর্যে মহিমান্বিত।

প্রশ্ন ৫: সূরাটির মূল বার্তা কী?
উত্তর: মূল বার্তা হলো—আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীকে অশেষ কল্যাণ দান করেছেন, এবং ঈমানদারদের জন্য সত্যিকারের সাফল্য নিহিত আছে কৃতজ্ঞতা ও আল্লাহর একনিষ্ঠ উপাসনায়।

প্রশ্ন ৬: সূরা আল-কাউসার কখন অবতীর্ণ হয়েছিল?
উত্তর: এটি একটি মক্কি সূরা, যা নবী (সা.)-এর প্রতি সান্ত্বনা ও আল্লাহর বরকতের বার্তা হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছিল।

প্রশ্ন ৭: সূরা আল-কাউসার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কীভাবে প্রযোজ্য?
উত্তর: সূরাটি শেখায় যে আমরা যেন আল্লাহর দান নিয়ে গর্ব না করি বরং কৃতজ্ঞ হই, নিয়মিত নামাজ আদায় করি, এবং নিঃস্বার্থভাবে তাঁর পথে ত্যাগ স্বীকার করি।

প্রশ্ন ৮: কেন সূরা আল-কাউসার অধ্যয়ন করা উচিত?
উত্তর: কারণ এই সূরা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে দুঃখ ও অবজ্ঞার মাঝেও আল্লাহর অনুগ্রহ অপরিসীম, এবং কৃতজ্ঞতার মাধ্যমেই মানুষ তাঁর নিকট মর্যাদা লাভ করে। 0 0 0