সূরা ১১১: আল-মাসাদ (তালপাতার দড়ি)-এর গভীর বার্তা অনুধাবন করুন—এটি এক কুরআনিক অধ্যায়, যা সত্যের প্রতি অহংকার ও শত্রুতাকে নিন্দা করে এবং আমাদের আল্লাহর ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
সূরা ১১১: আল-মাসাদ (তালপাতার দড়ি)
ভূমিকা
সূরা আল-মাসাদ, যাকে সূরা তাব্বত নামেও ডাকা হয়, ইসলাম-বিরোধী এক কঠিন ব্যক্তিত্ব — আবু লাহাব এবং তার স্ত্রী — সম্পর্কে আল্লাহর চূড়ান্ত ঘোষণা বহন করে। এই সূরা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছিল, যখন নবী মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর একত্বের আহ্বান প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন। আবু লাহাব ছিলেন নবীর চাচা, কিন্তু তিনি ইসলাম ও নবীর বার্তার অন্যতম প্রবল শত্রুতে পরিণত হন। সূরাটিতে আল্লাহ ঘোষণা করেন যে তার সম্পদ, মর্যাদা ও দম্ভ তাকে রক্ষা করতে পারবে না। বরং সে এবং তার স্ত্রী উভয়েই দহনশীল অগ্নির শাস্তি ভোগ করবে। এটি কেবল তাদেরই নয়, বরং সেই সকল অহংকারী ও ঈমান-অস্বীকারকারীদের জন্য এক চিরন্তন সতর্কতা, যারা সত্যকে বিদ্রূপ করে।
সূরা আল-মাসাদ: পাঠ্যাংশ
পরম করুণাময়, অতিশয় দয়ালু আল্লাহর নামে।
(১) ধ্বংস হোক আবু লাহাবের দুই হাত, এবং সে নিজেও ধ্বংসপ্রাপ্ত হোক।
(২) তার ধন-সম্পদ ও উপার্জন তাকে কোনো উপকারে আসবে না।
(৩) সে শীঘ্রই প্রবেশ করবে প্রজ্বলিত অগ্নিতে।
(৪) আর তার স্ত্রী—যে বহন করে কাঁটাযুক্ত জ্বালানি—
(৫) তার গলায় থাকবে তালগাছের আঁশের রশি।
ব্যাখ্যা (Comment)
এই সূরাটি ইসলামের ইতিহাসে এক অনন্য দলিল, যেখানে আল্লাহ সরাসরি একজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে তার পরিণতি ঘোষণা করেছেন। আবু লাহাব, নবী (সা.)-এর চাচা হলেও, ইসলাম প্রচারের শুরু থেকেই বিদ্বেষ ও ঘৃণায় পূর্ণ ছিলেন। তিনি নবীকে উপহাস করতেন, বলতেন—“এই ধর্মে বিশ্বাস করলে আমরা কী লাভ পাব?” তিনি একবার জনসমক্ষে বলেছিলেন—“তোমার ধ্বংস হোক, মুহাম্মদ!”—আর আল্লাহ তখনই নাযিল করেন এই সূরা, যেখানে বলা হলো: “ধ্বংস হোক আবু লাহাবের দুই হাত!”
আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামিলও নবীর শত্রু ছিলেন। তিনি কাঁটাযুক্ত কাঠ সংগ্রহ করে রাতে নবীর পথে বিছিয়ে দিতেন। আল্লাহ তাই তাঁর পরিণতি বর্ণনা করেছেন—অগ্নির শাস্তি এবং গলায় জ্বলন্ত আঁশের রশি।
এই সূরার মূল বার্তা হলো, ধন, অহংকার, বা সামাজিক মর্যাদা আল্লাহর শাস্তি থেকে কাউকে রক্ষা করতে পারে না। সত্য অস্বীকার ও নবীর প্রতি বিদ্বেষই ধ্বংস ডেকে আনে। এটি সব যুগের মানুষের জন্য সতর্কতা—যে আল্লাহর দীনকে অবজ্ঞা করে, সে নিজের জন্য আগুনই আহ্বান করে।
You May Like: সূরা ১০৭: আল-মাউন
সূরা আল-মাসাদ সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১: সূরা আল-মাসাদ কী বিষয়ে?
উত্তর: এটি আবু লাহাব ও তার স্ত্রীর পরিণতি সম্পর্কে, যারা নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর শত্রুতা করেছিল এবং আল্লাহর বার্তাকে অস্বীকার করেছিল।
প্রশ্ন ২: “আল-মাসাদ” শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: “আল-মাসাদ” অর্থ “তালগাছের আঁশ” বা “জ্বলন্ত আঁশের রশি”, যা আবু লাহাবের স্ত্রীর গলায় শাস্তি হিসেবে থাকবে।
প্রশ্ন ৩: সূরা আল-মাসাদ থেকে আমরা কী শিক্ষা পাই?
উত্তর: আমরা শিখি যে অহংকার, ধনসম্পদ ও ধর্মবিরোধিতা মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়; আল্লাহর শাস্তি থেকে কেউ মুক্ত নয়।
প্রশ্ন ৪: সূরাটিতে কয়টি আয়াত আছে?
উত্তর: সূরা আল-মাসাদে মোট ৫টি আয়াত রয়েছে।
প্রশ্ন ৫: সূরাটির মূল বার্তা কী?
উত্তর: মূল বার্তা হলো—যারা আল্লাহর রাসূল ও সত্যের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করে, তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনে।
প্রশ্ন ৬: সূরাটি কখন অবতীর্ণ হয়েছিল?
উত্তর: এটি একটি মক্কি সূরা, ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে অবতীর্ণ হয়েছিল, যখন নবী (সা.) প্রথম প্রকাশ্যে আহ্বান দেন।
প্রশ্ন ৭: সূরা আল-মাসাদ আমাদের জীবনে কীভাবে প্রযোজ্য?
উত্তর: সূরাটি আমাদের শেখায়—সত্যকে অবজ্ঞা করা, অন্যকে হেয় করা বা ধর্ম নিয়ে উপহাস করা বড় পাপ; আল্লাহর ন্যায়বিচার থেকে কেউই নিরাপদ নয়।
প্রশ্ন ৮: কেন সূরা আল-মাসাদ অধ্যয়ন করা উচিত?
উত্তর: কারণ এটি আল্লাহর ন্যায়বিচার, সত্যের অপরাজেয়তা ও অহংকারের পরিণতি সম্পর্কে গভীর শিক্ষা দেয়; এটি আমাদের বিনয়ী ও সচেতন হতে আহ্বান জানায়। 0 0 0






