সূরা ১১২: আল-ইখলাস (বিশুদ্ধতা)-এর গভীর অর্থ উদ্ঘাটন করুন—এটি এক কুরআনিক অধ্যায়, যা আল্লাহর একত্ব ঘোষণা করে, বিশুদ্ধ তাওহিদের শিক্ষা দেয় এবং ইসলামী বিশ্বাসের মর্মকথা প্রকাশ করে।
সূরা ১১২ : আল-ইখলাস (বিশুদ্ধ একত্ববাদ)
ভূমিকা
সূরা আল-ইখলাস হলো কুরআনের হৃদয়সম এক সূরা—যেখানে আল্লাহর একত্ব, চিরকালীনতা, এবং তুলনাহীন সত্তার সংক্ষিপ্ত অথচ পরিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছিল, যখন কিছু মানুষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছিল—“তোমার রব কেমন?”—তখন আল্লাহ এই সূরার মাধ্যমে ঘোষণা করেন তাঁর একক ও পরম মহিমা।
এই সূরা ইসলামের মূল ভিত্তি—তাওহিদ বা একত্ববাদ—কে এমনভাবে সংজ্ঞায়িত করে, যা মানববুদ্ধির সব সীমাকে ছাড়িয়ে যায়। এতে বলা হয়েছে, আল্লাহ এক ও অখণ্ড, তিনি কারও উৎপন্ন নন, কারও দ্বারা জন্মিতও নন, এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।
সূরা আল-ইখলাস: পাঠ্যাংশ
পরম করুণাময়, অতিশয় দয়ালু আল্লাহর নামে।
(১) বলো—তিনি আল্লাহ, যিনি এক ও অখণ্ড।
(২) আল্লাহ—যিনি সকলের আশ্রয়, যাঁর উপর সকল কিছু নির্ভরশীল, অথচ তিনি কারও উপর নির্ভরশীল নন।
(৩) তিনি জন্ম দেননি, আর তিনি জন্মগ্রহণও করেননি।
(৪) এবং তাঁর সমকক্ষ, তুল্য কিংবা সাদৃশ্য কোনো কিছুই নেই। 0 0 0
You May Like: সূরা ১০৭: আল-মাউন
ব্যাখ্যা (Comment)
এই সূরাটি এক আয়াতের পর আরেক আয়াতের মধ্য দিয়ে আল্লাহর সত্তাকে এমন স্পষ্টভাবে চিত্রিত করে, যা আর কোনো ভাষায় এত সংক্ষিপ্ত অথচ গভীরভাবে বলা সম্ভব নয়।
“বল, তিনি আল্লাহ, এক”— এখানে “এক” (আহাদ) শব্দটি কেবল সংখ্যাগত এক নয়; এটি অনন্য, অবিভাজ্য, তুলনাহীন একত্বকে বোঝায়। তিনি সৃষ্ট নয়, বরং সমস্ত সৃষ্টির স্রষ্টা।
“আল্লাহুস সামাদ”— অর্থাৎ, তিনি সেই সত্তা, যাঁর কাছে প্রত্যেক সত্তা নির্ভরশীল, অথচ তিনি কারও উপর নির্ভরশীল নন। তাঁর শক্তি, জ্ঞান, ও করুণা সবকিছুর উর্ধ্বে।
“তিনি জন্ম দেননি, আর জন্মগ্রহণও করেননি”— এখানে বাতিল করা হয়েছে ঈশ্বরত্বের সব মানবিক ধারণা—যে ঈশ্বর সন্তান জন্ম দেন বা কারও দ্বারা জন্মিত হন। আল্লাহ সময়, রূপ, বা বংশের সীমার বাইরে।
“তাঁর সমতুল্য কেউ নেই”— অর্থাৎ, কোনো রূপ, কোনো শক্তি, কোনো দেবতা, কোনো ধারণা—কিছুই তাঁর সমকক্ষ হতে পারে না।
এই সূরাটি আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমার এমন এক ঘোষণা, যা বিশ্বাসীর অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে। নবী (সা.) বলেছেন, “যে সূরা আল-ইখলাস পাঠ করে, সে যেন কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ পাঠ করল,” কারণ এতে আল্লাহর সত্তা ও গুণের সারমর্ম নিহিত।
সূরা আল-ইখলাস বিশ্বাসীকে শিখায় আত্মিক একত্ব—যে জীবনের প্রতিটি দিকেই মানুষ আল্লাহর একক উপস্থিতি উপলব্ধি করবে। যখন মানুষ এই একত্ব উপলব্ধি করে, তখন তার মন থেকে ভয়, লোভ, ও বিভাজন বিলুপ্ত হয়। তখন সে নিজেই শান্তি ও আলোর পথে ফিরে আসে।
সূরা আল-ইখলাস সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১: সূরা আল-ইখলাসের মূল বিষয় কী?
উত্তর: আল্লাহর একত্ব, চিরস্থায়িত্ব এবং তুলনাহীনতা—এই সূরার মূল বার্তা।
প্রশ্ন ২: “আল-ইখলাস” শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: “ইখলাস” মানে বিশুদ্ধতা বা খাঁটি আন্তরিকতা—এটি আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ নিষ্কলুষ বিশ্বাসের প্রতীক।
প্রশ্ন ৩: সূরাটিতে কয়টি আয়াত রয়েছে?
উত্তর: সূরা আল-ইখলাসে মোট ৪টি আয়াত আছে।
প্রশ্ন ৪: সূরাটি কুরআনের কোন অংশের সমান সওয়াব বহন করে?
উত্তর: নবী (সা.) বলেছেন, এটি কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান সওয়াব বহন করে।
প্রশ্ন ৫: এই সূরা পাঠের উপকারিতা কী?
উত্তর: এটি হৃদয়কে পবিত্র করে, ঈমানকে দৃঢ় করে, এবং মানুষকে আল্লাহর একত্বে নিবিষ্ট করে।
প্রশ্ন ৬: সূরাটি কবে অবতীর্ণ হয়েছিল?
উত্তর: এটি একটি মক্কি সূরা, ইসলামের প্রাথমিক যুগে অবতীর্ণ।
প্রশ্ন ৭: সূরা আল-ইখলাস আমাদের কী শেখায়?
উত্তর: আমরা শিখি যে সত্যিকারের ঈমান মানে আল্লাহর একত্বে বিশুদ্ধ বিশ্বাস রাখা—যেখানে অন্য কিছু বা কেউ সমান নয়। 0 0 0






