কুরআনের শেষ অধ্যায় সূরা আন-নাস-এর গভীর বার্তা অনুধাবন করুন—এটি মানুষকে শিক্ষা দেয় যে, মানবজাতির প্রতিপালক, রাজা ও উপাস্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে, যেন তাঁরা কুমন্ত্রণা ও অশুভ প্রবৃত্তির অনিষ্ট থেকে রক্ষা পান। এর আয়াতসমূহের বিশদ ব্যাখ্যা অনুসন্ধান করুন, যা এর আধ্যাত্মিক গুরুত্ব ও আত্মিক শান্তি ও সুরক্ষার বাস্তব পাঠকে তুলে ধরে।
সূরা ১১৪: আন-নাস (মানব জাতি)
ভূমিকা
সূরা আন-নাস কুরআনের শেষ সূরা—এটি এক আত্মিক আশ্রয়ের ঘোষণা, যেখানে মানুষকে শেখানো হয়েছে কেবল আল্লাহর কাছেই রক্ষা প্রার্থনা করতে—বিশেষত সেই অদৃশ্য শয়তানী প্রভাব থেকে, যা মানুষের হৃদয়ে কুমন্ত্রণা দেয়। সূরা আল-ফালাকের সঙ্গে এটি মিলে গঠন করে “মু‘আউযাতাইন”—দুটি আশ্রয় প্রার্থনামূলক সূরা। আল-ফালাক বাহ্যিক অমঙ্গল থেকে রক্ষার দোয়া, আর আন-নাস অন্তর্নিহিত অমঙ্গল—অর্থাৎ শয়তানের ফিসফিসানি থেকে আত্মাকে রক্ষার প্রার্থনা। এটি এমন এক সূরা, যা মানবজাতির মনন, হৃদয় ও বিশ্বাসকে আল্লাহর করুণায় নিরাপদ রাখার প্রতীক।
সূরা আন-নাস: পাঠ্যাংশ
পরম করুণাময়, অতিশয় দয়ালু আল্লাহর নামে।
(১) বলো, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানবজাতির পালনকর্তার নিকট—
(২) মানবজাতির সম্রাটের নিকট—
(৩) মানবজাতির উপাস্যর নিকট—
(৪) সেই দুষ্ট কুমন্ত্রণা দাতার অমঙ্গল থেকে, যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়—
(৫) জিন ও মানুষের মধ্য থেকে।
ব্যাখ্যা (Comment)
এই সূরাটি মানবমনের গভীরে ঘটে চলা এক অদৃশ্য যুদ্ধের কথা বলে—যেখানে ঈমান ও প্রলোভনের সংঘর্ষ চলে অবিরাম।
“মানবজাতির পালনকর্তা”— আল্লাহই সমস্ত মানুষের প্রকৃত অভিভাবক ও রক্ষাকারী। তাঁর এই গুণ বিশ্বাসীকে স্মরণ করিয়ে দেয়, প্রতিটি চিন্তা ও অনুভূতির শুদ্ধতার জন্য কেবল তাঁর কাছেই আশ্রয় চাইতে হবে।
“মানবজাতির সম্রাট”— এখানে আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতার ঘোষণা আছে। তিনি একমাত্র শাসক—যাঁর নিকট প্রতিটি প্রাণ, প্রতিটি ভাগ্য নির্ধারিত।
“মানবজাতির উপাস্য”— অর্থাৎ তিনি একমাত্র প্রাপ্য উপাসনা ও ভালোবাসার। মানুষকে আহ্বান জানানো হয়েছে যেন তারা অন্য কোনো শক্তি, বস্তু, বা ব্যক্তিকে তাঁর সমকক্ষ না করে।
“যে কুমন্ত্রণা দেয়”— এই ফিসফিসানিকারী হলো শয়তান, যে মানুষের হৃদয়ে সন্দেহ, ভয়, হিংসা, ও পাপের চিন্তা প্রবেশ করায়। কখনও সে জিন জাতির, কখনও মানুষের রূপে আসে।
“জিন ও মানুষের মধ্য থেকে”— অর্থাৎ, মন্দ প্রভাব কেবল অদৃশ্য জগতেই নয়; কখনও মানুষও সেই প্রভাবের বাহক হয়ে ওঠে, যখন সে অন্যকে বিপথে প্ররোচিত করে।
এই সূরাটি মানুষকে শিখায়, প্রকৃত নিরাপত্তা কোনো বাহ্যিক শক্তিতে নয়, বরং আত্মার ভিতরকার পবিত্রতায় এবং আল্লাহর সান্নিধ্যে।
সূরা আন-নাস মানবজীবনের আধ্যাত্মিক মনোবিজ্ঞানকে তুলে ধরে—মানুষের মনে চলা নীরব প্রলোভন ও সংশয়ের বিরুদ্ধে আল্লাহর আশ্রয়ই একমাত্র মুক্তির পথ। এটি এক হৃদয়প্রার্থনা, যেখানে মানুষ বলে—
“হে আল্লাহ, তুমি আমার পালনকর্তা, তুমি আমার রাজা, তুমি আমার উপাস্য—আমাকে আমার নিজের মনের অন্ধকার থেকে রক্ষা করো।”
এই সূরা পড়লে অন্তর শান্ত হয়, চিন্তা পরিষ্কার হয়, আর আত্মা আলোর পথে ফিরে আসে।
You May Like: সূরা ১০৮: আল-কাউসার
সূরা আন-নাস সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১: সূরা আন-নাসের মূল বার্তা কী?
উত্তর: আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা—শয়তানের ফিসফিসানি ও মানসিক অমঙ্গল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য।
প্রশ্ন ২: “আন-নাস” শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: “আন-নাস” অর্থ মানবজাতি বা সমস্ত মানুষ।
প্রশ্ন ৩: সূরাটিতে কয়টি আয়াত রয়েছে?
উত্তর: সূরা আন-নাসে মোট ৬টি আয়াত আছে।
প্রশ্ন ৪: সূরা আল-ফালাক ও আন-নাসকে একত্রে কেন পাঠ করা হয়?
উত্তর: কারণ আল-ফালাক বাহ্যিক অমঙ্গল থেকে রক্ষা দেয়, আর আন-নাস অন্তরের অমঙ্গল থেকে রক্ষা দেয়—দুটিই মিলিয়ে পূর্ণ নিরাপত্তার দোয়া।
প্রশ্ন ৫: সূরাটি কখন অবতীর্ণ হয়েছিল?
উত্তর: এটি একটি মক্কি সূরা, নবী (সা.)-এর প্রতি কঠিন সময়ে তাঁর অন্তরকে প্রশান্ত রাখার জন্য অবতীর্ণ।
প্রশ্ন ৬: সূরা আন-নাস আমাদের কী শেখায়?
উত্তর: এটি শেখায় যে মানুষ যতই শক্তিশালী হোক, তার অন্তরের শান্তি ও সুরক্ষা কেবল আল্লাহর আশ্রয়ে সম্ভব।
প্রশ্ন ৭: সূরাটির পাঠের উপকারিতা কী?
উত্তর: এটি শয়তানের প্রভাব, হিংসা, মানসিক বিভ্রান্তি ও ভয় থেকে রক্ষা করে, মনকে স্থির ও নির্মল রাখে। 0 0 0






