সূরা ত্বা-হা আল্লাহর করুণা, পথনির্দেশনা এবং ন্যায়বিচারের একটি শক্তিশালী স্মারক। এর একটি প্রধান শিক্ষা হল যে কুরআন আমাদের বোঝা চাপানোর জন্য নয়, বরং সত্যের দিকে আমাদেরকে কোমলভাবে পরিচালিত করার জন্য প্রেরিত হয়েছে।
সূরা ২০: ত্বা-হা (রহস্যময় অক্ষর)
ভূমিকা
সূরা ত্বা-হা পবিত্র কুরআনের ২০তম সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছিল এবং এতে মোট ১৩৫টি আয়াত রয়েছে। সূরাটির নামকরণ করা হয়েছে দুটি আরবি অক্ষর ‘তা’ এবং ‘হা’ থেকে, যা সূরার শুরুতে উপস্থিত। অন্যান্য সূরার মতো, যেগুলি বিচ্ছিন্ন অক্ষর দিয়ে শুরু হয়, এর সঠিক অর্থ কেবল আল্লাহই জানেন।
এই সূরাটি মূলত হযরত মূসা (আঃ) -এর কাহিনীর উপর আলোকপাত করে । এতে ফেরাউনকে পথ দেখানো এবং বনী ইসরাঈলকে মুক্ত করার লক্ষ্য বর্ণনা করা হয়েছে। এই কাহিনীতে আল্লাহর শক্তি, একজন নবীর সংগ্রাম এবং ঐশ্বরিক সাহায্যে বিশ্বাস, ধৈর্য এবং আস্থার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। মূসা এবং ফেরাউনের মধ্যে সংঘর্ষ, অলৌকিক ঘটনা এবং সমুদ্রের দ্বিখণ্ডিত হওয়ার ঘটনা বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে।
সূরা ত্বা-হা বিশ্বাসীদেরকে বিচার দিনের বাস্তবতা এবং ঈশ্বরের নির্দেশনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পরিণতি সম্পর্কেও স্মরণ করিয়ে দেয়। এটি জোর দিয়ে বলে যে কুরআন মানুষের উপর বোঝা চাপানোর জন্য নয়, বরং একটি স্মারক এবং রহমত হিসেবে প্রেরিত হয়েছে।
এই সূরাটি এমন এক সময়ে নাযিল হয়েছিল যখন নবী মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর অনুসারীরা মক্কায় বিরোধিতার মুখোমুখি হচ্ছিলেন। এটি তাদের উৎসাহ, সান্ত্বনা এবং প্রমাণ দিয়েছিল যে সত্য সর্বদা মিথ্যার উপর জয়লাভ করে। বিখ্যাতভাবে বলা হয়েছে যে উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) এই সূরার প্রথম আয়াতগুলি শোনার পর থেকেই ধর্মান্তরিত হন।
সামগ্রিকভাবে, সূরা ত্বা-হা ঐশ্বরিক করুণা, ঈশ্বরের নির্দেশনা অনুসরণের গুরুত্ব এবং কষ্টের মুখেও সত্যে দৃঢ় থাকার বিষয়ে শিক্ষা দেয়। ০ ০ ০
সূরা ২০: ত্বা-হা (রহস্যময় পত্র): পাঠ
পরম দয়ালু , পরম করুণাময় আল্লাহর নামে।
১. তা-হা।
২. তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আমরা তোমার উপর কুরআন নাজিল করিনি,
৩. কিন্তু যারা আল্লাহকে স্মরণ করে তাদের জন্য কেবল একটি স্মারক হিসেবে।
৪. এটি সেই সত্তার পক্ষ থেকে একটি প্রত্যাদেশ যিনি পৃথিবী এবং সুউচ্চ আকাশ সৃষ্টি করেছেন—
৫. পরম করুণাময়, যিনি আরশের উপরে অধিষ্ঠিত।
৬. আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে, এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী যা কিছু আছে এবং মাটির নিচে যা কিছু আছে, সবই তাঁর।
৭. তুমি প্রকাশ্যে কথা বলো অথবা তোমার কথা গোপন রাখো, তিনি জানেন কোনটা গোপন এবং কোনটা আরও গোপন।
৮. আল্লাহ – তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তাঁরই জন্য রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ।
৯. মূসার কাহিনী কি তোমার কাছে পৌঁছেছে?
১০. যখন তিনি আগুন দেখলেন, তখন তিনি তাঁর পরিবারবর্গকে বললেন, ‘এখানে অপেক্ষা করুন। আমি আগুন দেখেছি। সম্ভবত আমি সেখান থেকে তোমাদের জন্য একটি মশাল আনতে পারব, অথবা আগুনের কাছে কিছু পথ খুঁজে পাব।’
১১. যখন সে তার কাছে এলো, তখন তাকে ডাকা হল, ‘হে মূসা!’
১২. আমি তোমার প্রভু, অতএব তোমার জুতা খুলে ফেল। তুমি পবিত্র উপত্যকা তুওয়াতে আছো।
১৩. আমি তোমাকে মনোনীত করেছি, অতএব তোমার প্রতি যা ওহী করা হচ্ছে তা শোনো।
১৪. নিশ্চয়ই আমিই আল্লাহ। আমি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। অতএব আমার ইবাদত করো এবং আমাকে স্মরণ করার জন্য নামায কায়েম করো।
১৫. কেয়ামত অবশ্যই আসবে – কিন্তু আমি তা গোপন রাখতে চাই – যাতে প্রতিটি ব্যক্তি তার কৃতকর্মের প্রতিদান পায়।
১৬. অতএব, যারা এতে বিশ্বাস করে না এবং তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তারা যেন তোমাকে এ থেকে বিচ্যুত না করে, অন্যথায় তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে।
১৭. ‘আর হে মূসা, তোমার ডান হাতে ওটা কী?’
১৮. সে বলল, ‘এটা আমার লাঠি। আমি এর উপর ভর দিই, আর এর সাহায্যে আমি আমার ভেড়ার জন্য পাতা ঝরাই। আর এর আমার অন্যান্য কাজেও আছে।’
১৯. আল্লাহ বললেন, ‘ওটা ছুঁড়ে ফেলো, হে মূসা।’
২০. অতঃপর তিনি তা ছুঁড়ে ফেললেন – আর তা একটি চলমান সাপে পরিণত হল।
২১. আল্লাহ বললেন, ‘এটা তুলে নাও এবং ভয় পেও না। আমরা একে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেব।’
২২. এবার তোমার হাত তোমার পোশাকে ঢুকাও, তা উজ্জ্বল সাদা হয়ে বেরিয়ে আসবে, কোন ক্ষতি ছাড়াই। এগুলো তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে ফেরাউন এবং তার সর্দারদের প্রতি দুটি নিদর্শন। তারা সত্যিই সীমা অতিক্রম করেছে।
২৩. ‘আমরা শীঘ্রই তোমাকে আমার কিছু মহান নিদর্শন দেখাবো।’
২৪. ফেরাউনের কাছে যাও, কারণ সে সত্যিই সীমালঙ্ঘন করেছে।
২৫. মূসা বললেন, ‘হে আমার পালনকর্তা, আমার জন্য আমার হৃদয় খুলে দিন।’
২৬. এবং আমার কাজ আমার জন্য সহজ করে দিন।
২৭. আর আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন।
২৮. যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।
২৯. আর আমার পরিবার থেকে আমার জন্য একজন সাহায্যকারী নিয়োগ করো।
৩০. হারুন, আমার ভাই।
৩১. তাঁর মাধ্যমে আমাকে শক্তিশালী করো
৩২. এবং তাকে আমার কাজে অংশীদার করো,
৩৩. যাতে আমরা তোমার অনেক প্রশংসা করতে পারি
৩৪. এবং তোমাকে বেশি বেশি স্মরণ করি।
৩৫. সত্যিই, তুমি সর্বদা আমাদের উপর নজর রাখছো।
৩৬. আল্লাহ বললেন, ‘হে মূসা, তোমার প্রার্থনা মঞ্জুর করা হল।’
৩৭. আমরা ইতিমধ্যেই আরেকবার তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম—
৩৮. যখন আমি তোমার মাকে আমি প্রত্যাদেশ করেছিলাম।
৩৯. “ওকে একটা ঝুড়িতে ভরে নদীতে ফেলে দাও। তারপর নদী ওকে তীরে ছুঁড়ে ফেলবে, আর আমার ও তার শত্রু তাকে ধরে নিয়ে যাবে।” আমি তোমাকে আমার ভালোবাসায় জড়িয়ে রেখেছি যাতে তুমি আমার নজরদারিতে লালিত-পালিত হতে পারো।
৪০. যখন তোমার বোন হেঁটে যাচ্ছিল এবং বলছিল, “আমি কি তোমাকে এমন একজনের সন্ধান দেব যে তার যত্ন নেবে?” তাই আমরা তোমাকে তোমার মায়ের সাথে পুনর্মিলন করিয়েছিলাম যাতে তার হৃদয় শান্ত হয় এবং দুঃখ না পায়। তারপর তুমি একজন ব্যক্তিকে হত্যা করেছ, কিন্তু আমরা তোমাকে দুঃখ থেকে রক্ষা করেছি এবং তোমাকে অনেক পরীক্ষায় ফেলেছি। তারপর তুমি বছরের পর বছর মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে অবস্থান করেছ। তারপর হে মূসা, পরিকল্পনা অনুযায়ী তুমি এখানে এসেছ।
৪১. আর আমি তোমাকে আমার জন্য মনোনীত করেছি।
৪২. তুমি এবং তোমার ভাই আমার নিদর্শনাবলী নিয়ে যাও এবং আমার স্মরণে শৈথিল্য করো না।
৪৩. তোমরা দুজনেই ফেরাউনের কাছে যাও, সে সত্যিই সীমা লঙ্ঘন করেছে।
৪৪. তার সাথে নরমভাবে কথা বলো, যাতে সে মনোযোগ দেয় অথবা কিছুটা ভয় পায়।
৪৫. তারা বলল, ‘হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা আশঙ্কা করি যে সে আমাদের ক্ষতি করবে অথবা আমাদের বিরুদ্ধে অহংকার করবে।’
৪৬. আল্লাহ বললেন, ‘তোমরা ভয় করো না। আমি তোমাদের উভয়ের সাথেই আছি। আমি সবকিছু শুনি এবং দেখি।’
৪৭. তার কাছে যাও এবং বলো, “আমরা তোমার প্রতিপালকের প্রেরিত রাসূল, সুতরাং বনী ইসরাঈলদের আমাদের সাথে যেতে দাও এবং তাদের উপর অত্যাচার করো না। আমরা তোমার প্রতিপালকের কাছ থেকে একটি নিদর্শন নিয়ে এসেছি। যারা হেদায়েতের অনুসরণ করে তাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।”
৪৮. আমাদের প্রতি ওহী পাঠানো হয়েছে যে, যে ব্যক্তি অস্বীকার করবে এবং মুখ ফিরিয়ে নেবে তার উপর শাস্তি বর্তাবে।
৪৯. ফেরাউন বলল, ‘হে মূসা, তোমাদের উভয়ের পালনকর্তা কে?’
৫০. মূসা বললেন, ‘আমাদের পালনকর্তা তিনি যিনি সবকিছুকে তার আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর পথপ্রদর্শন করেছেন।’
৫১. ফেরাউন বলল, ‘তাহলে পূর্ববর্তীদের কি হবে?’
৫২. মূসা বললেন, ‘তাদের জ্ঞান আমার প্রতিপালকের কাছে একটি কিতাবে রক্ষিত আছে। আমার প্রতিপালক ভুল করেন না এবং ভুলেও যান না।’
৫৩. তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে বাসস্থান করেছেন এবং তাতে তোমাদের জন্য পথ তৈরি করেছেন এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, যার সাহায্যে আমি বিভিন্ন ধরণের উদ্ভিদ জোড়ায় জোড়ায় উৎপন্ন করি।
৫৪. তোমরা খাও এবং তোমাদের গবাদি পশু চরাও। এতে বুদ্ধিমানদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।
৫৫. যে মাটি থেকে আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি, তাতেই তোমাদের ফিরিয়ে দেবো এবং পুনরায় তা থেকেই তোমাদের বের করে আনবো।
৫৬. আমি ফেরাউনকে আমার সকল নিদর্শন দেখিয়েছিলাম, কিন্তু সে মিথ্যা বলেছে এবং অমান্য করেছে।
৫৭. সে বলল, হে মূসা, তুমি কি তোমার যাদুর জোরে আমাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করতে এসেছ?
৫৮. তাহলে আমরা অবশ্যই তোমার কাছে অনুরূপ জাদু নিয়ে আসব। অতএব আমাদের এবং তোমার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করো, যা আমরা বা তুমি কেউই ভঙ্গ করবে না।
৫৯. মূসা বললেন, ‘তোমাদের মিলন উৎসবের দিনে, আর লোকদের সকালে সমবেত করো।’
৬০. অতঃপর ফেরাউন মুখ ফিরিয়ে নিল এবং তার কৌশলগুলো একত্রিত করে হাজির হল।
৬১. মূসা তাদেরকে বললেন, ‘তোমাদের জন্য দুর্ভোগ! আল্লাহর উপর মিথ্যা রচনা করো না, অন্যথায় তিনি তোমাদেরকে শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করবেন। যে মিথ্যা রচনা করে সে অবশ্যই ব্যর্থ হয়েছে।’
৬২. অতঃপর তারা তাদের বিষয় সম্পর্কে পরস্পর বিতর্ক করল এবং তাদের কথাবার্তা গোপন রাখল।
৬৩. তারা বলল, ‘এই দুজন জাদুকর, তারা তাদের জাদুর জোরে তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করতে এবং তোমাদের সর্বোত্তম জীবনধারা ধ্বংস করতে চায়।’
৬৪. তাই তোমাদের পরিকল্পনা সংগ্রহ করো এবং এক কাতারে এগিয়ে এসো। আজ যে জিতবে সে অবশ্যই সফল হবে।
৬৫. তারা বলল, ‘হে মূসা, তুমি কি প্রথমে নিক্ষেপ করবে, না আমরা প্রথমে নিক্ষেপ করব?’
৬৬. মূসা বললেন, ‘তোমরাই প্রথমে নিক্ষেপ করো।’ অতঃপর তারা তাদের রশি ও লাঠি নিক্ষেপ করল, আর তাদের জাদুর প্রভাবে তারা যেন দ্রুত গতিতে ছুটে চললো।
৬৭. মূসা নিজের মনে কিছুটা ভয় অনুভব করলেন।
৬৮. আমরা (আল্লাহ) বললাম, ‘ভয় পেও না! তুমিই বিজয়ী হবে।’
৬৯. তোমার ডান হাতে যা আছে তা ছুঁড়ে ফেলো, এটা তাদের তৈরি জিনিসগুলো গিলে ফেলবে। তারা যা তৈরি করেছে তা কেবল জাদুকরের কৌশল। জাদুকররা যেখানেই যাক না কেন, কখনোই সফল হবে না।
৭০. অতঃপর জাদুকররা সেজদায় লুটিয়ে পড়ল এবং বলল, ‘আমরা হারুন ও মূসার প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনলাম।’
৭১. ফেরাউন বলল, ‘আমি তোমাদের অনুমতি দেওয়ার আগেই কি তোমরা তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করলে? সে নিশ্চয়ই তোমাদের প্রভু যে তোমাদেরকে জাদু শিখিয়েছে! আমি অবশ্যই তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলব এবং খেজুর গাছের কাণ্ডে তোমাদেরকে শূলে চড়াব। তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে কার শাস্তি বেশি কঠোর এবং দীর্ঘস্থায়ী!’
৭২. তারা বলল, ‘আমরা কখনই তোমাকে আমাদের কাছে আসা স্পষ্ট নিদর্শনগুলির উপর এবং যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন তাঁর উপর অগ্রাধিকার দেব না। অতএব তুমি যা ইচ্ছা করো। তুমি কেবল পার্থিব জীবনের বিষয়গুলি নির্ধারণ করতে পারো।’
৭৩. আমরা আমাদের পালনকর্তার প্রতি ঈমান এনেছি যাতে তিনি আমাদের পাপ এবং তুমি আমাদের যে জাদু করতে বাধ্য করেছ তা ক্ষমা করেন। আল্লাহ উত্তম এবং স্থায়ী।
৭৪. নিশ্চয়ই, যে কেউ তার পালনকর্তার কাছে পাপী হয়ে আসে, তার জন্য জাহান্নাম আছে, যেখানে সে মরবে না, বাঁচবেও না।
৭৫. কিন্তু যারা তাঁর কাছে মুমিন হয়ে সৎকর্ম করে আসবে, তাদের জন্য রয়েছে উচ্চ মর্যাদা।
৭৬. চিরস্থায়ী নেয়ামতের জান্নাত, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। যারা পবিত্রতা অর্জন করে, তাদের জন্য এটিই প্রতিদান।
৭৭. আর আমরা মূসাকে ওহী পাঠিয়েছিলাম যে, আমার বান্দাদের সাথে রাতের বেলায় বেরিয়ে পড়ো এবং তাদের জন্য সমুদ্রের মধ্য দিয়ে একটি শুষ্ক পথ তৈরি করো। ধরা পড়ার ভয় করো না এবং ভয়ও করো না।
৭৮. অতঃপর ফেরাউন তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করল, কিন্তু সমুদ্র তাদেরকে ডুবিয়ে দিল।
৭৯. ফেরাউন তার সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করেছিল এবং তাদের পথ দেখায়নি।
৮০. হে বনী-ইসরাঈল! আমি তোমাদেরকে তোমাদের শত্রুর কবল থেকে রক্ষা করেছি এবং পাহাড়ের ডান দিকে তোমাদের সাথে ওয়াদা করেছি এবং তোমাদের উপর মান্না ও সালওয়া (স্বর্গীয় খাদ্য) নাযিল করেছি।
৮১. আমি তোমাদের যে পবিত্র রিযিক দিয়েছি তা থেকে খাও, কিন্তু তাতে সীমালঙ্ঘন করো না, অন্যথায় আমার ক্রোধ তোমাদের উপর নেমে আসবে। আর যার উপর আমার ক্রোধ নেমে আসে সে অবশ্যই পতিত হয়।
৮২. তবুও যে তওবা করে, ঈমান আনে, সৎকর্ম করে এবং তারপর সঠিক পথে থাকে, আমি তার প্রতি সত্যিই ক্ষমাশীল।
৮৩. ‘হে মূসা, তুমি তোমার সম্প্রদায়ের সামনে এত তাড়াহুড়ো করে কেন এলে?’
৮৪. তিনি বললেন, ‘তারা আমার পিছনে আছে, আর আমি তোমার কাছে ছুটে এসেছি, হে আমার পালনকর্তা, যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও।’
৮৫. আল্লাহ বললেন, ‘কিন্তু তোমার চলে যাওয়ার পর আমি তোমার সম্প্রদায়কে পরীক্ষা করেছি এবং সামেরী তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে।’
৮৬. অতঃপর মূসা রাগান্বিত ও দুঃখিত অবস্থায় তার সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে এলেন। তিনি বললেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়, তোমাদের পালনকর্তা কি তোমাদেরকে উত্তম প্রতিশ্রুতি দেননি? তোমাদের জন্য কি সময় দীর্ঘ ছিল? নাকি তোমরা চেয়েছিলে তোমাদের পালনকর্তার ক্রোধ তোমাদের উপর নেমে আসুক, তাই তোমরা আমার সাথে করা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছ?’
৮৭. তারা বলল, ‘আমরা নিজের ইচ্ছায় তোমার সাথে করা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করিনি। আমাদেরকে মানুষের অলংকার বোঝা বহন করতে বাধ্য করা হয়েছিল এবং আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। সামিরী এটাই পরামর্শ দিয়েছিলেন।’
৮৮. তারপর সে তাদের জন্য একটি বাছুর তৈরি করল, যা ছিল প্রাণহীন, যার একটি শব্দ ছিল। তারা বলল, ‘এটি তোমাদের উপাস্য এবং মূসারও উপাস্য, কিন্তু সে ভুলে গেল।’
৮৯. তারা কি দেখেনি যে, এটি তাদের কোন কথার জবাব দিতে পারে না, না তাদের কোন ক্ষতি করতে পারে, না তাদের কোন উপকার করতে পারে?
৯০. হারুন পূর্বেই তাদেরকে বলেছিলেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদেরকে কেবল এর মাধ্যমে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তোমাদের পালনকর্তা পরম করুণাময়। অতএব, তোমরা আমার অনুসরণ করো এবং আমার আদেশ পালন করো।’
৯১. কিন্তু তারা বলল, ‘মূসা আমাদের কাছে ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা এর পূজা বন্ধ করব না।’
৯২. মূসা বললেন, হে হারুন, যখন তুমি তাদেরকে পথভ্রষ্ট হতে দেখলে, তখন তোমাকে কিসে বাধা দিল?
৯৩. আমার অনুসরণ করা থেকে বিরত? তুমি কি আমার আদেশ অমান্য করেছ?
৯৪. তিনি বললেন, ‘হে আমার মাতৃপুত্র! আমার দাড়ি ও মাথা ধরে রেখো না। আমি ভয় পেয়েছিলাম যে তুমি বলবে, “তুমি বনী ইসরাঈলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছ এবং আমার কথা মান্য করোনি।”
৯৫. মূসা বললেন, ‘আর তোমার ব্যাপার কি, হে সামেরী?’
৯৬. তিনি বললেন, ‘আমি এমন কিছু দেখেছি যা তারা দেখেনি। তাই আমি দূতের পায়ের ছাপ থেকে এক মুঠো জিনিস নিয়ে আগুনে নিক্ষেপ করলাম। আমার আত্মা আমাকে সেই কাজটি করতে অনুপ্রাণিত করল।’
৯৭. মূসা বললেন, ‘তাহলে তুমি চলে যাও! তোমার জন্য এই জীবনেই বলা ফরজ করা হয়েছে, ‘আমাকে স্পর্শ করো না!’ আর তোমার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় আছে যা তুমি মিস করবে না। এখন তোমার সেই ‘ঈশ্বর’র দিকে তাকাও যার প্রতি তুমি এত অনুগত ছিলে – আমরা এটি পুড়িয়ে ফেলব এবং এর অবশিষ্টাংশ সমুদ্রে ছড়িয়ে দেব।’
৯৮. তোমাদের একমাত্র উপাস্য হলেন আল্লাহ, তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। তিনি সবকিছু জানেন।
৯৯. এভাবেই আমি তোমার কাছে পূর্ববর্তী কিছু ঘটনা বর্ণনা করছি এবং আমি তোমাকে আমার পক্ষ থেকে একটি উপদেশ দান করেছি।
১০০. যে ব্যক্তি তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে অবশ্যই কিয়ামতের দিন ভারী বোঝা বহন করবে।
১০১. চিরকাল এর নিচে কো। বোঝা বহন করা দিনটি কত ভয়াবহ!
১০২. যেদিন শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে, সেদিন আমি অপরাধীদেরকে সমবেত করব, তাদের চোখ থাকবে অন্ধকার।
১০৩. তারা একে অপরকে ফিসফিসিয়ে বলবে, ‘তোমরা মাত্র দশ দিন [পৃথিবীতে] অবস্থান করেছিলে।’
১০৪. আমরা ভালো করে জানি তারা কী বলবে, যখন তাদের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান ব্যক্তি বলবে, ‘তুমি মাত্র একদিন অবস্থান করেছ।’
১০৫. তারা তোমাকে পাহাড় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। তুমি বলো, ‘আমার পালনকর্তা এগুলোকে সম্পূর্ণরূপে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন।’
১০৬. এবং পৃথিবীকে সমতল ভূমিতে রেখে দিবে।
১০৭. কোন পাহাড় বা উপত্যকা ছাড়াই।
১০৮. সেদিন সবাই আহবানকারীর ডাকের অনুসরণ করবে, পিছন ফিরে যাবে না। দয়াময়ের সামনে সকল আওয়াজ স্তব্ধ হয়ে যাবে এবং তুমি কেবল ফিসফিসানি শুনতে পাবে।
১০৯. তখন কেউ সুপারিশ করতে পারবে না—যাকে পরম করুণাময় অনুমতি দিয়েছেন এবং যার কথা তিনি পছন্দ করেছেন, সে ছাড়া।
১১০. তিনি জানেন যা তাদের সামনে আছে এবং যা তাদের পিছনে আছে, কিন্তু তারা তাদের জ্ঞান দ্বারা তাঁকে ধরতে পারে না।
১১১. চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী আল্লাহর সামনে সকল মুখমন্ডল অবনত হবে এবং যে ব্যক্তি অন্যায় করেছে সে ব্যর্থ হবে।
১১২. কিন্তু যে ব্যক্তি মুমিন থাকাকালীন সৎকর্ম করবে, সে অন্যায় বা অবিচারের ভয় পাবে না।
১১৩. এভাবেই আমি এটি স্পষ্ট আরবীতে নাযিল করেছি এবং এতে অনেক সতর্কবাণী বর্ণনা করেছি – যাতে তারা স্মরণশক্তি লাভ করে, অথবা এটি তাদের স্মরণশক্তি জাগিয়ে তোলে।
১১৪. সত্য বাদশাহ আল্লাহ পবিত্র ও মহিমান্বিত। তোমার প্রতি কুরআনের ওহী সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কুরআন নিয়ে তাড়াহুড়ো করো না এবং বলো, ‘হে আমার পালনকর্তা, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করো।’
১১৫. আর আমরা পূর্বে আদমের সাথে অঙ্গীকার করেছিলাম, কিন্তু সে ভুলে গিয়েছিল এবং তার মধ্যে কোন দৃঢ় সংকল্প পাইনি।
১১৬. যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম, ‘আদমকে সেজদা করো’, তখন ইবলিস ছাড়া সবাই সেজদা করল। সে অস্বীকৃতি জানাল।
১১৭. অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আদম, এ তোমার এবং তোমার স্ত্রীর শত্রু। অতএব, সে যেন তোমাদের উভয়কে জান্নাত থেকে বের করে না দেয়, অন্যথায় তোমরা কষ্ট পাবে।’
১১৮. তুমি সেখানে ক্ষুধার্ত থাকবে না বা উলঙ্গ থাকবে না,
১১৯. আর তুমি পিপাসার্ত হবে না বা সূর্যের তাপে কষ্ট পাবে না।
১২০. অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দেয় এবং বলে, ‘হে আদম, আমি কি তোমাকে চিরস্থায়ী বৃক্ষ এবং এমন এক রাজত্বের কথা বলে দেব যা কখনও ম্লান হবে না?’
১২১. অতঃপর তারা উভয়েই তা থেকে খেলেন, তাদের লজ্জাস্থান তাদের সামনে উন্মুক্ত হয়ে গেল এবং তারা জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজেদের ঢেকে ফেলতে লাগল। আদম তার প্রতিপালকের অবাধ্যতা করেছিল, ফলে সে পথভ্রষ্ট হয়ে গেল।
১২২. অতঃপর তার পালনকর্তা তাকে মনোনীত করলেন, তার তওবা কবুল করলেন এবং তাকে পথ প্রদর্শন করলেন।
১২৩. তিনি বললেন, ‘তোমরা উভয়ে (আদম এবং ইবলিশ) এখান থেকে নেমে যাও – তোমরা সবাই – একে অপরের শত্রু। কিন্তু যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে হেদায়েত আসবে, তখন যে আমার হেদায়েত অনুসরণ করবে সে পথভ্রষ্ট হবে না এবং কষ্ট পাবে না।’
১২৪. যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবন হবে কষ্টকর এবং কিয়ামতের দিন আমি তাকে অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।
১২৫. সে বলবে, ‘হে আমার পালনকর্তা, আমি তো দেখতে পাচ্ছিলাম, অথচ আপনি আমাকে অন্ধ করে কেন উঠালেন?’
১২৬. সে বলবে, ‘যেমন আমার নিদর্শন তোমার কাছে এসেছিল, অতঃপর তুমি সেগুলো উপেক্ষা করেছিলে, তেমনি আজ তোমাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে।’
১২৭. যারা সীমালঙ্ঘন করে এবং তাদের পালনকর্তার নিদর্শনাবলীতে বিশ্বাস করে না, তাদের আমরা এভাবেই প্রতিফল দিই। আর পরকালের শাস্তি অনেক কঠোর এবং স্থায়ী।
১২৮. এটা কি তাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় নয় যে, তাদের পূর্বে আমি কত প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিয়েছি, যাদের ঘরবাড়ি দিয়ে তারা এখন বিচরণ করে? নিশ্চয়ই এতে বুদ্ধিমানদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।
১২৯. যদি তোমার পালনকর্তার পক্ষ থেকে পূর্বেই নির্ধারিত একটি কথা এবং একটি নির্দিষ্ট সময় না থাকত, তাহলে শাস্তি তৎক্ষণাৎ এসে পড়ত।
১৩০. অতএব, তারা যা বলে তাতে ধৈর্য ধরো। সূর্যোদয়ের আগে এবং সূর্যাস্তের আগে তোমার প্রতিপালকের প্রশংসা সহকারে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো। রাতের কিছু অংশে এবং দিনের শেষ প্রান্তে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো, যাতে তুমি সন্তুষ্ট হতে পারো।
১৩১. আমি তাদের কাউকে কাউকে যে পার্থিব সম্পদ দিয়েছি, তার প্রতি আকুল দৃষ্টিতে তাকাও না, এটা কেবল তাদের পরীক্ষার জন্য। তোমার প্রতিপালক তোমাকে যা দান করেন তা উত্তম এবং দীর্ঘস্থায়ী।
১৩২. তোমার পরিবারবর্গকে নামাযের নির্দেশ দাও এবং তাতে অবিচল থাকো। আমরা (আল্লাহ) তোমার কাছে কোন রিযিক চাই না, বরং আমরাই তোমাকে রিযিক দেই। আর পরিণাম শুভ তাদের জন্য যারা সাবধানতা অবলম্বন করে।
১৩৩. তারা বলে, ‘সে তার পালনকর্তার কাছ থেকে আমাদের কাছে কোন নিদর্শন আনে না কেন?’ পূর্ববর্তী কিতাবগুলিতে যা আছে, তার কোন স্পষ্ট প্রমাণ কি তাদের কাছে এখনও আসেনি?
১৩৪. যদি আমি তাদেরকে এর আগেই শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করতাম, তাহলে তারা বলত, ‘হে আমাদের পালনকর্তা, তুমি আমাদের কাছে একজন রসূল পাঠাওনি কেন যাতে আমরা অপমানিত হওয়ার আগে তোমার নিদর্শন অনুসরণ করতে পারি?’
১২৫. বলো, ‘সবাই অপেক্ষা করছে, তাই তোমরাও অপেক্ষা করো। শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে কে সরল পথে আছে এবং সঠিক পথপ্রাপ্ত হয়েছে।’ ০ ০ ০
মন্তব্য
সূরা ত্বা-হা আল্লাহর করুণা, পথনির্দেশনা এবং ন্যায়বিচারের একটি শক্তিশালী স্মারক। এর একটি প্রধান শিক্ষা হল যে কুরআন আমাদের বোঝা চাপানোর জন্য নয়, বরং সত্যের দিকে আমাদেরকে কোমলভাবে পরিচালিত করার জন্য প্রেরিত হয়েছে। সূরার শুরু থেকেই এটি স্পষ্ট করা হয়েছে, যেখানে আল্লাহ বলেছেন: “আমরা তোমাদের উপর কুরআন নাযিল করিনি যাতে তোমরা কষ্ট পাও।” (আয়াত ২)
এই সূরার মূল বিষয়বস্তু হলো হযরত মুসা (আঃ)-এর কাহিনী। পবিত্র উপত্যকা তুয়ায় আল্লাহর ডাকে সাড়া দেওয়া থেকে শুরু করে সাহসের সাথে ফেরাউনের মুখোমুখি হওয়া, বনী ইসরাঈলদের দাসত্ব থেকে মুক্তি দেওয়া পর্যন্ত তাঁর যাত্রা ঈমান, ধৈর্য এবং পরীক্ষার সময় আল্লাহর উপর নির্ভর করার গুরুত্বের শিক্ষায় পূর্ণ। মুসার সৎ ভয়, বিনয়ী প্রার্থনা এবং আল্লাহর উপর তাঁর গভীর নির্ভরতা একজন নবীর মানবিক দিক প্রদর্শন করে এবং আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া কখনই দুর্বলতা নয় – এটি প্রকৃত শক্তির পথ।
ফেরাউনের অহংকার এবং সত্য গ্রহণে অস্বীকৃত, অবিচার এবং সত্যের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত শক্তির পরিণতি। অন্যদিকে, জাদুকরদের বিশ্বাস, যারা মৃত্যুর হুমকির মুখেও আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখেছিল, আমাদের শিক্ষা দেয় যে, সত্য মানুষের হৃদয়ে প্রবেশ করতে পারে যখন তারা আন্তরিক নিদর্শন দেখে – এমনকি যদি তারা একসময় এর শত্রুও ছিল।
সূরাটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো যারা আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাদের জন্য সতর্কীকরণ। আল্লাহ বলেন যে, যে কেউ তাঁর নির্দেশনা ভুলে যাবে, সে কঠিন জীবনযাপন করবে এবং কিয়ামতের দিন অন্ধভাবে পুনরুত্থিত হবে। এটি ঈমানের সাথে জীবনযাপন এবং এই পৃথিবী ও পরকালে শান্তি খুঁজে পাওয়ার মধ্যে গভীর সম্পর্ককে দেখায়।
পরিশেষে, সূরাটি নবী মুহাম্মদ (সা.) এবং সমস্ত মুমিনদের ধৈর্য ধরতে, প্রার্থনা করতে এবং দৃঢ় থাকতে স্মরণ করিয়ে দেয়। এটি আমাদেরকে এই পৃথিবীর সম্পদ এবং বিলাসিতা দ্বারা বিভ্রান্ত না হতে বলে এবং প্রকৃত সাফল্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের মধ্যেই নিহিত।
সূরা ত্বা-হা প্রজ্ঞা, আবেগের গভীরতা এবং চিরন্তন নির্দেশনায় পরিপূর্ণ। এটি আত্মার সাথে কথা বলে – ব্যথায় সান্ত্বনা, কষ্টে আশা এবং বিভ্রান্তিতে স্পষ্টতা প্রদান করে। ০ ০ ০
You May Like: আল-কাহফ (গুহা)
তা-হা: অতিরিক্ত অধ্যয়ন
সূরা ত্বা-হা সম্পর্কে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
প্রশ্ন ১. সূরা ত্বা-হা কী সম্পর্কে?
সূরা ত্বা-হা মূলত হযরত মুসা (আঃ) এর কাহিনী, ফেরাউনকে পথ দেখানোর জন্য তাঁর মিশন এবং ঈমান, ধৈর্য এবং আল্লাহর উপর নির্ভরতার শিক্ষার উপর আলোকপাত করে।
প্রশ্ন ২. সূরা ত্বা-হা কেন বলা হয়?
ত্বা-হা নামটি সূরার শুরুতে থাকা রহস্যময় আরবি অক্ষর থেকে এসেছে। কুরআনের অন্যান্য বিচ্ছিন্ন অক্ষরের মতো, এর সঠিক অর্থ কেবল আল্লাহই জানেন।
প্রশ্ন ৩. সূরা ত্বা-হা-তে কয়টি আয়াত আছে?
সূরা ত্বা-হা-তে ১৩৫টি আয়াত রয়েছে এবং এটি মক্কার সূরা হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ।
প্রশ্ন ৪. সূরা ত্বা-হা-এর মূল বিষয়বস্তু কী?
সূরা ত্বা-হা-এর বিষয়বস্তুর মধ্যে রয়েছে হযরত মুসার মিশন, ফেরাউনের প্রত্যাখ্যান, নামাজের গুরুত্ব, কুরআনের নির্দেশনা এবং চূড়ান্ত বিচার।
প্রশ্ন ৫. সূরা ত্বা-হা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
সূরা ত্বা-হা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি কঠিন সময়ে আল্লাহর উপর নির্ভরতা শেখায়, ঐশ্বরিক নির্দেশনার শক্তি তুলে ধরে এবং বিশ্বাসীদের জীবনের উদ্দেশ্য স্মরণ করিয়ে দেয়।
প্রশ্ন ৬. সূরা ত্বা-হা নবী মুসা সম্পর্কে কী শিক্ষা দেয়?
সূরা ত্বা-হা দেখায় যে নবী মুসা অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন, কিন্তু ধৈর্য এবং আল্লাহর সাহায্যে তিনি ফেরাউনের অত্যাচারকে পরাস্ত করতে এবং তার লোকদের পথ দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন।
প্রশ্ন ৭. সূরা ত্বা-হা কখন নাযিল হয়েছিল?
নবী মুহাম্মদের মিশনের প্রাথমিক বছরগুলিতে সূরা ত্বা-হা মক্কায় নাযিল হয়েছিল, যেখানে বিশ্বাস, ধৈর্য এবং আশার উপর আলোকপাত করা হয়েছিল।
প্রশ্ন ৮. আজকের দিনে বিশ্বাসীদের জন্য সূরা ত্বা-হা-এর বার্তা কী?
সূরা ত্বা-হা-এর বার্তা হল নামাজে অবিচল থাকা, আল্লাহর জ্ঞানের উপর আস্থা রাখা এবং পরীক্ষার মুখেও তাঁর নির্দেশনা অনুসরণ করা। ০ ০ ০






