Home Bengali সূরা ৮২: আল-ইনফিতার (বিচ্ছিন্নকরণ)

সূরা ৮২: আল-ইনফিতার (বিচ্ছিন্নকরণ)

0

সূরা ৮২: আল-ইনফিতার (বিদীর্ণ হওয়া) এর অর্থ উদ্ঘাটন করুন। কিয়ামতের দিনের লক্ষণসমূহ, আমল লিপিবদ্ধকারী ফেরেশতাদের ভূমিকা এবং প্রতিদান ও শাস্তির নিশ্চিত সত্য সম্পর্কে জানুন। আত্মিক চিন্তা ও অনুধাবনের জন্য সহজ ভাষায় সূরা আল-ইনফিতার অন্বেষণ করুন।

সূরা ৮২ আল-ইনফিতার

সূরা ৮২: আল-ইনফিতার (বিচ্ছিন্নকরণ)

ভূমিকা

সূরা আল-ইনফিতার, যার অর্থ বিচ্ছিন্নকরণ, পবিত্র কুরআনের ৮২তম সূরা, যা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এতে উনিশটি ছোট এবং শক্তিশালী আয়াত রয়েছে যা শেষ দিনের ঘটনাবলীকে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে। সূরাটি বিস্ময়কর মহাজাগতিক দৃশ্য দিয়ে শুরু হয় – আকাশ বিদীর্ণ, তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা, সমুদ্র উপচে পড়া এবং কবরগুলি তাদের মৃতদের বের করে আনা। এই চিহ্নগুলি ভৌত ​​জগতের পতন এবং চিরন্তন বাস্তবতার সূচনাকে চিহ্নিত করে। সেই নির্ণায়ক মুহূর্তে, প্রতিটি আত্মা জানতে পারবে যে সে জীবনে কী করেছে এবং তার জন্য কী পরিণতি সঞ্চয় করেছে। এরপর সূরাটি সরাসরি মানবজাতিকে সম্বোধন করে জিজ্ঞাসা করে যে কেন তারা তাদের উদার প্রভু সম্পর্কে প্রতারিত হচ্ছে, যিনি তাদের নিখুঁত আকারে সৃষ্টি করেছেন, গঠন করেছেন এবং সমানুপাত করেছেন। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে মহান ফেরেশতারা প্রতিটি ব্যক্তির জন্য নিযুক্ত, প্রতিটি কাজ নির্ভুলতার সাথে লিপিবদ্ধ করে। অবশেষে, সূরাটি চূড়ান্ত বিচ্ছেদ স্পষ্ট করে – ধার্মিকরা আনন্দে বাস করবে, যখন দুষ্টদের একটি অনিবার্য জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। এই অধ্যায়টি শেষ করা হয়েছে জোর দিয়ে যে, কেয়ামতের দিন কেউ অন্য কাউকে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখবে না, কারণ সমস্ত আদেশ একমাত্র আল্লাহরই। ০ ০ ০

আল-ইনফিতার (বিচ্ছিন্নকরণ): 

পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে।

(১) যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে,

(২) আর যখন তারাগুলো বিক্ষিপ্ত হয়ে খসে পড়বে,

(৩) আর যখন সমুদ্র উথলে উঠবে,

(৪) আর যখন কবরগুলো উল্টে দেওয়া হবে,

(৫) তখন প্রত্যেকেই জানতে পারবে সে কী আগে পাঠিয়েছে এবং কী পিছনে ফেলে এসেছে।

(৬) হে মানুষ, তোমার দয়ালু প্রতিপালক সম্পর্কে তোমাকে কী বিভ্রান্ত করেছে?

(৭) যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, তোমাকে সুন্দরভাবে গঠন করেছেন এবং তোমাকে সুষম করেছেন।

(৮) তিনি তোমাদেরকে যে আকৃতিতে ইচ্ছা করেছেন, তাতেই একত্রিত করেছেন।

(9) না, বরং তোমরা বিচারকে অস্বীকার করছো।

(১০) অথচ তোমাদের উপর রক্ষক নিযুক্ত আছে।

(১১) মহৎ এবং রেকর্ডিং,

(১২) তোমরা যা কিছু করো, তারা তা জানে।

(১৩) নিশ্চয়ই সৎকর্মশীলরা থাকবে আনন্দে,

(14) আর নিশ্চয়ই পাপীরা জ্বলন্ত আগুনে থাকবে।

(১৫) তারা কিয়ামতের দিন তাতে প্রবেশ করবে।

(16) এবং তারা তা থেকে অনুপস্থিত থাকবে না।

(17) আর তুমি কি জানো বিচারের দিন কী?

(১৮) আবার, তুমি কিসে বুঝতে পারবে বিচারের দিন কী?

(১৯) সেই দিন, যখন কেউ অন্য কারো উপর কোন কিছু করার ক্ষমতা রাখবে না এবং সেদিন সমস্ত কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহরই হবে। ০ ০ ০

আল-ইনফিতার: মন্তব্য

সূরা আল-ইনফিতার বিচার দিনের নিশ্চিততা এবং গুরুত্বের একটি শক্তিশালী স্মারক। এর প্রাণবন্ত চিত্র পাঠককে পার্থিব বিক্ষেপের আরাম থেকে নাড়া দেয়, জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে চিন্তা করতে এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে উৎসাহিত করে। বারবার বলা প্রশ্ন – “এবং কেয়ামতের দিন কী তা তোমাকে বুঝতে সাহায্য করবে?” – উত্তরের জন্য অনুরোধ হিসেবে নয় বরং গভীর সচেতনতা এবং নম্রতা জাগানোর জন্য একটি জাগ্রত আহ্বান হিসেবে কাজ করে। সূরাটি সেই মিথ্যা নিরাপত্তার অনুভূতি প্রকাশ করে যা মানুষকে তাদের স্রষ্টার প্রতি তাদের দায়িত্ব অবহেলা করতে প্রতারিত করে। এটি শিক্ষা দেয় যে এই পৃথিবীর জীবন ক্ষণস্থায়ী, যখন কর্মের রেকর্ড স্থায়ী। পরিশেষে, এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আমাদের স্রষ্টা এবং প্রতিপালক আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্ক আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত, কারণ সেই দিনে আল্লাহ ইচ্ছা না করলে কোনও সুপারিশ, ক্ষমতা বা সম্পদ কারও উপকারে আসবে না। অতএব, সূরাটি গাফেলদের জন্য একটি সতর্কীকরণ এবং যারা খুব দেরি হওয়ার আগে তাদের প্রভুর কাছে ফিরে যেতে চান তাদের জন্য একটি রহমত হিসেবে দাঁড়িয়েছে। 0 0 0

You May Like: সূরা  ৭৭: আল-মুরসালাত (যারা প্রেরিত)

সূরা ৮২: আল-ইনফিতার সম্পর্কে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

প্রশ্ন ১. সূরা ৮২: আল-ইনফিতার (বিচ্ছিন্নকরণ) কী সম্পর্কে?
সূরা ৮২: আল-ইনফিতার (বিচ্ছিন্নকরণ) কেয়ামতের দিনের দৃশ্য সম্পর্কে, যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে, সমুদ্র প্লাবিত হবে এবং প্রতিটি প্রাণীকে তার কর্ম সম্পর্কে অবহিত করা হবে।

প্রশ্ন ২. সূরা ৮২ কে কেন আল-ইনফিতার বলা হয়?
সূরা ৮২ কে আল-ইনফিতার বলা হয় কারণ এটি আকাশের বিভাজনের চিত্র দিয়ে শুরু হয়, যা কিয়ামতের দিনে মহাজাগতিক পরিবর্তনের প্রতীক।

প্রশ্ন ৩. সূরা ৮২-এ কতটি আয়াত আছে?
সূরা ৮২-এ ১৯টি আয়াত রয়েছে, যা মক্কায় নাজিল হয়েছে, যেখানে পুনরুত্থান, জবাবদিহিতা এবং ঐশ্বরিক ন্যায়বিচারের উপর আলোকপাত করা হয়েছে।

প্রশ্ন ৪. সূরা ৮২ থেকে আমরা কী শিক্ষা পেতে পারি?
সূরা ৮২ শিক্ষা দেয় যে পরকাল নিশ্চিত, প্রতিটি কাজ ফেরেশতাদের দ্বারা লিপিবদ্ধ করা হয় এবং মানুষ তাদের কর্মের উপর ভিত্তি করে জান্নাত অথবা জাহান্নামের মুখোমুখি হবে।

প্রশ্ন ৫. সূরা ৮২ কীভাবে পরকাল বর্ণনা করে?
সূরা ৮২ মহাজাগতিক ধ্বংস, কর্মের প্রকাশ এবং ধার্মিক ও দুষ্টের মধ্যে পার্থক্যের স্পষ্ট লক্ষণ সহ পরকাল বর্ণনা করে।

প্রশ্ন ৬. সূরা ৮২: আল-ইনফিতার কোথায় নাজিল হয়েছিল?
সূরা ৮২ মক্কায় নাজিল হয়েছিল, যেখানে পুনরুত্থান, জবাবদিহিতা এবং ঐশ্বরিক বিচার সম্পর্কে মূল বিশ্বাসের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল।

প্রশ্ন ৭. সূরা ৮২ কেন বিশ্বাসীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
সূরাটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি বিশ্বাসীদের পরকালের নিশ্চয়তার কথা মনে করিয়ে দেয়, সৎকর্মে উৎসাহিত করে এবং ঐশ্বরিক জবাবদিহিতা অবহেলা করার বিরুদ্ধে সতর্ক করে। ০ ০ ০