Home Bengali সূরা ২ | আল-বাকারা (গাভী)

সূরা ২ | আল-বাকারা (গাভী)

0

সূরা ২: আল-বাকারা (গাভী) কুরআনের সবচেয়ে বিস্তৃত সূরা, যা বিশ্বাসীদের জন্য আল্লাহর অমোঘ নির্দেশনা, আধ্যাত্মিক শক্তি এবং জীবনের সঠিক পথ প্রদর্শন করে। পাঠ করুন এবং আল্লাহর রহমত ও শিক্ষার দিগন্ত খুলুন।

সূরা ২   আল-বাকারা (গাভী)

Table of Contents

সূরা  ২: আল-বাকারা (গাভী)

ভূমিকা

সূরা আল-বাকারা কুরআনের দ্বিতীয় এবং দীর্ঘতম অধ্যায়। “আল-বাকারা” নামের অর্থ “গাভী (ছোট গরু),” এবং এটি নবী মুসা এর সময়ে একটি গাভী সম্পর্কে গল্প থেকে এসেছে, যা আনুগত্য এবং বিশ্বাস সম্পর্কে শিক্ষা দেয়। এই সূরাটি নবী মুহাম্মদ (সাঃ) হিজরত করার পর মদিনায় নাযিল হয় । এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকাশিত হয়েছিল এবং এতে ন্যায়বিচার, বিশ্বাস এবং উত্তম চরিত্রের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী মুসলিম সম্প্রদায় গড়ে তোলার নির্দেশনা রয়েছে।

সূরাটি এই ঘোষণা দিয়ে শুরু হয়েছে যে কুরআন তাদের জন্য একটি পথনির্দেশের বই যারা আল্লাহকে স্মরণ করে। এটি বিভিন্ন ধরণের লোকদের সম্পর্কে কথা বলে – যারা বিশ্বাস করে, যারা অবিশ্বাস করে এবং যারা বিশ্বাস করার ভান করে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভণ্ড। সূরার একটি বড় অংশ বনী ইসরাইল এর ইতিহাস সম্পর্কে কথা বলে। সূরাটি দেখিয়েছে কিভাবে তারা আল্লাহর আশীর্বাদ পেয়েছিল কিন্তু প্রায়শই তাঁর আদেশ অমান্য করেছিল। এই গল্পটি মুসলমানদের অনুরূপ ভুল এড়াতে শেখায়।

এটিতে অ্যাডাম (আদম), ইব্রাহিম (আব্রাহাম) এবং মুসা এর মতো গুরুত্বপূর্ণ নবীদের গল্পও রয়েছে–তারা কীভাবে আল্লাহর উপর আস্থা রেখেছিল এবং তাঁর নির্দেশনা অনুসরণ করেছিল তা দেখানো হয়েছে। উল্লেখিত মূল ঘটনাগুলির মধ্যে একটি হল জেরুজালেম থেকে মক্কার কাবার দিকে প্রার্থনার দিক (কিবলা) পরিবর্তন করা। এই পরিবর্তন মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বাধীনতা এবং হযরত ইব্রাহিমের বিশ্বাসের সাথে তাদের সংযোগ চিহ্নিত করেছে।

এই সূরাটিতে অনেক ইসলামিক নিয়ম চালু করা হয়েছে, যেমন নামাজ, রোজা, দান (যাকাত), তীর্থযাত্রা (হজ), বিবাহ, তালাক, ব্যবসা এবং ন্যায়বিচার সম্পর্কে। সূরাটি সুদ (রিবা) গ্রহণের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে সতর্ক করে এবং বাণিজ্যে ন্যায্যতা এবং লেনদেনে সততাকে উৎসাহিত করে। এটি শেখায় যে  পরকালে সাফল্য আসে আল্লাহর আনুগত্য, অন্যদের সাহায্য এবং সত্য ও দয়ার সাথে জীবন-যাপন করার মাধ্যমে ।

এই সূরার শেষ প্রার্থনাটি কুরআনের সবচেয়ে সুন্দর প্রার্থনাগুলির মধ্যে একটি। সামগ্রিকভাবে, সূরা আল-বাকারা ব্যক্তিগত জীবন, সামাজিক শৃঙ্খলা এবং আধ্যাত্মিক বৃদ্ধির জন্য একটি সম্পূর্ণ নির্দেশিকা প্রদান করে।

পাঠ্য: আল-বাকারা (যুবতী গাভী)

পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে

1. আলিফ। লাম। মীম।

2. এই কিতাব; এতে কোন সন্দেহ নেই। এটা তাদের জন্য পথপ্রদর্শক যারা আল্লাহর প্রতি মনোযোগী।

3. যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যা দিয়েছি তা থেকে দান করে।

4. আর যারা আপনার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা নাযিল করা হয়েছে তাতে যারা বিশ্বাস করে এবং পরকালে বিশ্বাস করে।

5. তারা তাদের পালনকর্তার দ্বারা সঠিকভাবে পরিচালিত এবং তারা সফল হবে।

6. যারা অবিশ্বাস করে – আপনি তাদের সতর্ক করুন বা না করুন তাতে কোন পার্থক্য নেই – তারা বিশ্বাস করবে না।

7. ঈশ্বর তাদের অন্তর ও শ্রবণে মোহর মেরে দিয়েছেন এবং তাদের চোখের উপর আবরণ রয়েছে। তাদের জন্য মহা শাস্তি হবে।

8. কিছু লোক বলে, “আমরা ঈশ্বর এবং শেষ দিনে বিশ্বাস করি” কিন্তু তারা প্রকৃত বিশ্বাসী নয়।

9. তারা ঈশ্বর ও মুমিনদেরকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু তারা নিজেদেরকে বোকা বানায় এবং তা উপলব্ধি করে না।

10. তাদের অন্তর অসুস্থ এবং ঈশ্বর তাদের অসুস্থতা বাড়িয়ে দিয়েছেন। মিথ্যা বলার কারণে তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

11. যখন তাদেরকে বলা হয়, “জমিনে ফাসাদ ছড়িয়ে দিও না,” তখন তারা বলে, “আমরা তো ভালোই করছি!”

12. আসলে তারাই দুর্নীতি ছড়ায়, কিন্তু তারা বোঝে না।

13. যখন বলা হয়, “অন্যরা যেমন বিশ্বাস করে তেমনি বিশ্বাস করো,” তারা বলে, “আমাদের কি বোকার মতো বিশ্বাস করা উচিত?” কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, তারাই বোকা-যদিও তারা বুঝতে পারে না।

14. তারা যখন মুমিনদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি। কিন্তু যখন তারা তাদের দুষ্ট নেতাদের সাথে একা থাকে, তখন তারা বলে, “আমরা আপনার সাথে আছি, আমরা কেবল উপহাস করছিলাম।”

15. ঈশ্বর তাদের উপহাস করেন এবং তাদের বিদ্রোহে অন্ধভাবে বিচরণ করতে দেন।

16. তারা পথভ্রষ্টতার বিনিময়ে হেদায়েতের লেনদেন করেছে, কিন্তু তাদের ব্যবসায় কোন লাভ হয় না এবং তারা হেদায়েত পায় না।

17. তাদের উদাহরণ হল এমন একজনের মতো যে আগুন জ্বালায়, এবং একবার এটি চারপাশকে আলোকিত করে, ঈশ্বর তাদের আলো কেড়ে নেন, তাদের অন্ধকারে রেখে দেন – দেখতে অক্ষম।

18. তারা বধির, বোবা এবং অন্ধ, তাই তারা ফিরে আসবে না।

19. অথবা অন্ধকার, বজ্র এবং বজ্রপাতে পূর্ণ আকাশ থেকে বৃষ্টির ঝড়ের মধ্যে ধরা পড়া লোকের মতো। মৃত্যুর ভয়ে তারা কানে আঙুল ঢুকিয়ে দেয়। কিন্তু ঈশ্বর কাফেরদের ঘিরে রেখেছেন।

20. বজ্রপাত প্রায় তাদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। যখনই এটি আলোকিত হয়, তারা এতে হেঁটে যায়। কিন্তু অন্ধকার হয়ে গেলে তারা থেমে যায়। যদি ঈশ্বর চান, তিনি তাদের শ্রবণশক্তি এবং দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিতে পারেন – ঈশ্বর সবকিছুর উপর ক্ষমতা রাখেন।

21. হে লোক সকল, তোমাদের পালনকর্তার ইবাদত কর যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা চিন্তাশীল হতে পার।

22. তিনি পৃথিবীকে আপনার বিশ্রামের স্থান এবং আকাশকে ছাদ বানিয়েছেন এবং তিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন যাতে তোমাদের খাদ্যের জন্য ফল উৎপন্ন হয়। সুতরাং যখন আপনি সত্য জানেন তখন আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করবেন না।

23. আমি আমাদের বান্দার (রাসূল)-এর প্রতি যা নাযিল করেছি তাতে যদি তোমরা সন্দেহ কর, তাহলে অনুরূপ একটি অধ্যায় নিয়ে আস এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের সাহায্যকারীদের ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।

24. কিন্তু আপনি যদি না পারেন – এবং আপনি কখনই পারবেন না – তাহলে সেই আগুনকে ভয় কর যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর, যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফেরদের জন্য।

25. আর যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে তাদেরকে সুসংবাদ দাও, তাদের জন্য রয়েছে উদ্যান যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। যখনই তাদের তা থেকে ফল দেওয়া হবে, তখন তারা বলবে, এটা তো আমাদের আগে দেওয়া হয়েছিল। তাদেরকে অনুরূপ জিনিস দেওয়া হবে এবং সেখানে তাদের পবিত্র জীবনসঙ্গী থাকবে এবং তারা সেখানে চিরকাল থাকবে।

26. আল্লাহ উদাহরণ দিতে লজ্জাবোধ করেন না, তা মশার মতো ক্ষুদ্র হলেও। যারা বিশ্বাস করে তারা জানে এটি তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সত্য, কিন্তু যারা অবিশ্বাস করে তারা বলে, “আল্লাহ এর দ্বারা কী বোঝাতে চান?” এর মাধ্যমে তিনি অনেককে পথ দেখান এবং অনেককে ভ্রষ্ট করেন -তবে তিনি ভ্রষ্ট করেন কেবল অবাধ্যদেরকেই।

27. তারা ঈশ্বরের চুক্তিকে মেনে নেওয়ার পরে ভঙ্গ করে, ঈশ্বর যা সংযুক্ত করার আদেশ দিয়েছিলেন তা কেটে ফেলে এবং পৃথিবীতে দুর্নীতি ছড়িয়ে দেয়। এরাই ক্ষতিগ্রস্ত।

28. আপনি কিভাবে ঈশ্বরকে অস্বীকার করতে পারেন যখন আপনি নিষ্প্রাণ ছিলেন এবং তিনি আপনাকে জীবন দিয়েছেন, তারপর তিনি আপনাকে মৃত্যু ঘটাবেন এবং আপনাকে আবার জীবন দান করবেন, তারপর আপনি তাঁর কাছে ফিরে আসবেন?

29. তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীর সবকিছু সৃষ্টি করেছেন, তারপর আকাশের দিকে ফিরে সাত আসমানে পরিণত করেছেন। সে সব জানে।

30. যখন তোমার রব ফেরেশতাদের বললেন, “আমি পৃথিবীতে একজন মানুষকে স্থাপন করব,” তারা বলল, “তুমি কি এমন কাউকে স্থাপন করবে যে ফাসাদ ছড়াবে এবং রক্তপাত করবে, অথচ আমরা তোমার প্রশংসা ও প্রশংসা করব?” তিনি বললেন, আমি জানি যা তুমি জানো না।

31. তিনি আদমকে সব কিছুর নাম শিখিয়েছিলেন। অতঃপর তিনি সেগুলো ফেরেশতাদেরকে দেখিয়ে বললেন, “আমাকে এগুলোর নাম বল, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।”

32. তারা বলল, “আপনি পবিত্র, আপনি আমাদের যা শিখিয়েছেন তা ছাড়া আমাদের কোন জ্ঞান নেই। আপনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।”

33. ঈশ্বর বললেন, হে আদম, তাদের নাম বল। যখন আদম বললেন, তখন ঈশ্বর বললেন, “আমি কি তোমাকে বলিনি যে আমি আকাশ ও পৃথিবীর অদৃশ্য জানি এবং আমি জানি তুমি যা প্রকাশ কর এবং যা গোপন কর?”

34. আর যখন আমি ফেরেশতাদেরকে আদমকে সেজদা করতে বলেছিলাম, তখন তারা সবাই সেজদা করল – ইবলিস (শয়তান) ব্যতীত। সে অস্বীকার করল এবং অহংকার করল এবং কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হল।

35. আমরা বললাম, হে আদম, তুমি ও তোমার স্ত্রী-বাগানে থাকো এবং নির্দ্বিধায় আহার করো, কিন্তু এই গাছের কাছে যেও না, না হলে তুমি জালেম (সীমালঙ্ঘনকারী) হয়ে যাবে।

36. কিন্তু শয়তান তাদের পিছলে গেল এবং তাদেরকে বাগান থেকে বের করে দিল। আমরা বললাম, “তোমরা একে অপরের শত্রু হয়ে নেমে যাও, তোমরা পৃথিবীতেই বাঁচবে ও মরবে এবং সেখান থেকেই তোমাদের পুনরুত্থিত হবে।”

37. অতঃপর আদম তার প্রভুর কাছ থেকে বাণী পেয়েছিলেন এবং ঈশ্বর তার অনুতাপ কবুল করেছিলেন। তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।

38. আমি বললাম, ‘তোমরা সবাই নেমে যাও। যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে পথনির্দেশ আসবে, তখন যে-ই আমার সেই পথনির্দেশ অনুসরণ করবে, তার কোনো ভয় থাকবে না এবং সে কোনো দুঃখও পাবে না।

39. কিন্তু যারা আমার নিদর্শনকে অস্বীকার করে এবং প্রত্যাখ্যান করে তারা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে।

40. হে বনী ইসরাঈল! আমার সেই অনুগ্রহ স্মরণ করো, যা আমি তোমাদের উপর করেছি। তোমরা আমার সাথে তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করো, আমি তোমাদের সাথে আমার অঙ্গীকার পূর্ণ করব। আর কেবল আমারই ভয় করো।”

41. এবং আমি যা অবতীর্ণ করেছি, তাতে তোমরা ঈমান আনো—যা তোমাদের কাছে থাকা গ্রন্থের সত্যতা প্রমাণ করে। তোমরা এ ব্যাপারে অবিশ্বাসে অগ্রগামী হয়ো না। আমার আয়াতগুলো তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি কোরো না। আর শুধু আমারই সচেতন থাকো।

42. তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিও না, আর জেনে শুনে সত্যকে গোপন কোরো না।”

43. নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।

44. তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও, অথচ নিজেদের ভুলে যাও—যখন তোমরা কিতাব পাঠ করো? তবে কি তোমরা বুঝবে না?”

45. ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য চাও। এটা কঠিন, যারা বিনয়ী তাদের ছাড়া।

46. তারা নিশ্চিত যে তারা তাদের পালনকর্তার সাথে দেখা করবে এবং তার কাছে ফিরে আসবে।

47. হে বনী ইসরাঈল, মনে রেখো আমি কিভাবে তোমাদের সকল জাতির উপরে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।

48. সেই দিন সম্পর্কে সচেতন হও যেদিন কোন আত্মা অপরকে সাহায্য করতে পারবে না, কোন অর্থ প্রদান করা হবে না এবং কোন সুপারিশ গৃহীত হবে না।

49. স্মরণ কর, যখন আমরা তোমাদেরকে ফেরাউনের সম্প্রদায়ের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলাম, যারা তোমাদের ওপর অত্যাচার করত, তোমাদের ছেলেদের হত্যা করত এবং তোমাদের নারীদের বাঁচিয়ে রাখত। এটা ছিল তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে এক মহা পরীক্ষা।

50. আর যখন আমি তোমাদের জন্য সমুদ্র বিভক্ত করেছিলাম এবং তোমাদেরকে উদ্ধার করেছিলাম, আর ফিরআউনের সম্প্রদায়কে তোমাদের চোখের সামনে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম।

51. আর যখন আমি মূসাকে কিতাব ও হেদায়েত দিয়েছিলাম, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও।

52. অতঃপর তোমরা বাছুর (মূর্তি) গ্রহণ করেছ এবং তোমরা অন্যায় করেছ।

53. তবুও আমরা তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও।

54. আর যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বললেন, ‘তোমরা তো বাছুরকে উপাসনা করে নিজেদের প্রতি জুলুম করেছ। সুতরাং তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে তাওবা করো এবং নিজেদের অপরাধী ব্যক্তিদের হত্যা করো।’ তখন আল্লাহ তোমাদের তাওবা কবুল করলেন। নিশ্চয়ই তিনি তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।

55. আর যখন তোমরা বলেছিলে, ‘হে মূসা! আমরা কখনোই তোমার প্রতি ঈমান আনব না, যতক্ষণ না আল্লাহকে প্রকাশ্যে আমাদের চোখে দেখি।’ তখন বজ্রাঘাত তোমাদেরকে আঘাত করল, আর তোমরা তা প্রত্যক্ষ করছিলে।

56. অতঃপর আমি তোমাদেরকে মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও।

57. আমরা তোমাকে মেঘ থেকে ছায়া দিয়েছি এবং তোমার কাছে মান্না ও কোয়েল পাঠিয়েছি। “আমাদের দেওয়া ভালো জিনিস খাও।” তারা আমাদের প্রতি জুলুম করেনি, বরং তারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছে।

58. এবং আমরা বলেছিলাম, “এই শহরে প্রবেশ কর এবং নির্দ্বিধায় আহার কর, তবে বল ‘আমাদের ক্ষমা কর’ এবং বিনীতভাবে প্রবেশ কর, আমরা তোমার পাপ ক্ষমা করব এবং সৎকর্মশীলদের জন্য বরকত বাড়িয়ে দেব।”

59. কিন্তু জালেমরা কথা পাল্টেছিল, ফলে আমি তাদের অবাধ্যতার জন্য আকাশ থেকে তাদের উপর শাস্তি পাঠিয়েছিলাম।

60. আর যখন মূসা পানি প্রার্থনা করলেন, আমি বললাম, ‘তোমার লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত করো।’ তখন সেখান থেকে বারোটি ঝরনা প্রবাহিত হলো। প্রত্যেক সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব পানীয় স্থান চিনে নিল। আমি বললাম, ‘তোমরা খাও এবং পান করো আল্লাহর রিযিক থেকে, তবে পৃথিবীতে সীমালঙ্ঘন করে অশান্তি সৃষ্টি কোরো না।’’

61. তারা বলল, ‘হে মূসা! আমরা এক ধরনের খাবারে আর ধৈর্য ধরতে পারছি না। তাই তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করো, তিনি আমাদের জন্য উৎপন্ন করুন শাকসবজি, শস্যদানা, রসুন, মসুর এবং পেঁয়াজ।’ মূসা বললেন, ‘তোমরা কি উত্তমের পরিবর্তে নিকৃষ্ট জিনিস বেছে নিতে চাইছ?’ এরপর তাদের উপর আরোপিত হলো লাঞ্ছনা ও দারিদ্র্য, কারণ তারা আল্লাহর বাণী অস্বীকার করেছিল।

62. নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে, ইহুদি, খ্রিস্টান এবং সাবিয়ানরা- যারা আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস করে এবং সৎকাজ করে- তারা পুরস্কৃত হবে এবং তারা ভয় বা দুঃখ পাবে না।

63. আর স্মরণ করো, যখন আমি তোমাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম এবং তোমাদের উপর পাহাড় তুলে ধরেছিলাম, আর বলেছিলাম, ‘আমি যে কিতাব তোমাদের দিয়েছি, দৃঢ়ভাবে তা ধারণ করো এবং মনোযোগ দিয়ে শোনো।’ তারা বলেছিল, ‘আমরা শুনলাম, কিন্তু মানব না।’ তাদের অন্তরে বাছুরের প্রতি ভালোবাসা ভরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাদের কুফরির কারণে।

64. বল, ‘যদি তোমরা সত্যিই ঈমানদার হও, তবে তোমাদের ঈমান তোমাদেরকে কতই না নিকৃষ্ট কাজে প্ররোচিত করছে!’”

65. তোমরা তো অবশ্যই জানো, তোমাদের মধ্য থেকে যারা সাবাথ (বিশ্রামবার / শনিবার) ভঙ্গ করেছিল, তাদের কী ঘটেছিল। তখন আমি তাদের বলেছিলাম, ‘অপমানিত ও ত্যাজ্য বানর হয়ে যাও।’

66. আমি তাদের শাস্তিকে করেছি এক সতর্কবার্তা—যারা তখন উপস্থিত ছিল তাদের জন্য এবং যারা পরবর্তীতে আসবে তাদের জন্য, আর যারা আল্লাহকে স্মরণ করে তাদের জন্য একটি শিক্ষা।

67. এবং যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বললেন, “আল্লাহ তোমাদেরকে একটি গরু কোরবানি করতে আদেশ করেছেন,” তখন তারা জবাব দিল, “তোমরা কি আমাদের নিয়ে মজা করছ?” মূসা বললেন, আমি মূর্খ হওয়া থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই।

68. তারা বলল, ‘তোমার প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করো যেন তিনি আমাদের জানিয়ে দেন, গাভীটি কেমন হবে।’ মূসা বললেন, ‘আল্লাহ বলেন, সেটি না খুব বৃদ্ধ, না খুব কচি—বরং এ দুটির মাঝামাঝি। সুতরাং তোমরা যা আদেশ করা হয়েছে, তা-ই সম্পাদন করো।

69. তারা বলল, তোমার রবকে বলুন যেন আমাদেরকে এর রঙ বলে দেন। তিনি বললেন, “এটি একটি উজ্জ্বল হলুদ গরু, দেখতে আনন্দদায়ক।”

70. তারা বলল, “আপনার পালনকর্তাকে বলুন, এটা ঠিক কী ধরনের গরু, কারণ সব গরুই আমাদের কাছে একই রকম। আল্লাহ চাইলে আমরা হেদায়েত পাব।”

71. তিনি বলেন, “এটি এমন একটি গরু যেটি জমিতে লাঙল বা ক্ষেতে পানি দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়নি। এটি স্বাস্থ্যকর এবং এতে কোন দাগ বা ত্রুটি নেই।” তারা শেষ পর্যন্ত এটিকে উৎসর্গ করেছিল, যদিও তারা তা করতে দ্বিধা করেছিল।

72. আর স্মরণ করো, যখন তোমরা একজন মানুষকে হত্যা করেছিলে এবং এ ব্যাপারে পরস্পর বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলে, অথচ আল্লাহ প্রকাশ করলেন যা তোমরা গোপন করছিলে।

73. অতঃপর আমরা বললাম, গাভীর অংশ দিয়ে শরীরে আঘাত কর। এভাবেই আল্লাহ মৃতদেরকে জীবিত করেন এবং তিনি তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শন দেখান যাতে তোমরা বুঝতে পার।

74. এত কিছুর পরেও, তোমাদের হৃদয় পাথরের মত কঠিন বা তার চেয়েও কঠিন হয়ে গেল। কিছু পাথর তাদের থেকে জল প্রবাহিত হতে দেয়, কিছু বিভক্ত হয় এবং জল বেরিয়ে আসে এবং কিছু ঈশ্বরের ভয়ে নিচে পড়ে যায়। তোমরা যা কর ঈশ্বর তা কখনই বেখবর নন।

75. আপনি কি এখনও আশা কর যে তারা আপনার  কথায় ঈমান আনবে, অথচ তাদের একদল আল্লাহর বাণী শুনত, তারপর তা বুঝে নেয়ার পর জেনে-শুনেই বিকৃত করে দিত?”

76. আর যখন তারা মুমিনদের সাথে সাক্ষাৎ করে, বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি।’ কিন্তু যখন তারা একান্তে একে অপরের সাথে মিলিত হয়, তখন বলে, ‘তোমরা কেন তাদের জানাও যা আল্লাহ তোমাদের প্রতি প্রকাশ করেছেন? যাতে তারা তা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে তোমাদের বিরুদ্ধে দলিল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে! তবে কি তোমরা কিছুই বুঝো না?’

77. তারা কি জানে না যে তারা যা কিছু গোপন করে এবং যা প্রকাশ করে সবই ঈশ্বর জানেন?

78. তাদের মধ্যে কেউ কেউ অশিক্ষিত এবং কিতাব জানে না – তারা কেবল অনুমান এবং আশা অনুসরণ করে।

79. অতএব ধ্বংস তাদের জন্য, যারা নিজেদের হাত দিয়ে কিতাব লিখে, তারপর বলে, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে,’—কেবল সামান্য লাভ অর্জনের জন্য। ধ্বংস তাদের জন্য, যা তাদের হাত লিখেছে তার কারণে, আর ধ্বংস তাদের জন্য, যা তারা উপার্জন করছে তার কারণে।”

80. “তারা বলে, ‘আগুন আমাদেরকে অল্প কিছু দিনের জন্যই স্পর্শ করবে।’ বল, ‘তোমরা কি আল্লাহর কাছ থেকে কোনো প্রতিশ্রুতি নিয়েছ?—তাহলে আল্লাহ কখনো তাঁর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবেন না। নাকি তোমরা আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলছ যা তোমরা জানো না?’”

81.“না! যারা মন্দ কাজ করে এবং যাদেরকে তাদের পাপ ঘিরে ফেলেছে—তারাই আগুনের অধিবাসী; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।”

82. কিন্তু যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তারা চিরকাল জান্নাতে থাকবে।

83. আর যখন আমরা বনী ইসরাঈলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো উপাসনা করবে না; এবং পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে, আত্মীয়স্বজন, ইয়াতিম ও অভাবগ্রস্তদের সঙ্গে সদাচার করবে; মানুষের সাথে সুন্দর কথা বলবে, নামাজ কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। কিন্তু তোমাদের অধিকাংশই মুখ ফিরিয়ে নিলে, অল্প কয়েকজন ছাড়া; আর তোমরা অঙ্গীকারভঙ্গ করলে।”

84. “আর যখন আমরা তোমাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলাম যে, তোমরা পরস্পরের রক্ত ঝরাবে না এবং একে অপরকে নিজ নিজ ঘর থেকে বহিষ্কার করবে না। তারপর তোমরা স্বীকার করলে এবং তোমরা তা মেনে নিলে।”

85. “কিন্তু তোমরা তো এমনই যে, তোমরা একে অপরকে হত্যা করো এবং নিজেদের লোকদেরকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে বের করে দাও। তোমরা পাপ ও সীমালঙ্ঘনে তাদের বিরুদ্ধে অন্যদেরকে সাহায্য করো। অথচ যখন তারা বন্দী হয়ে তোমাদের কাছে আসে, তখন তোমরা মুক্তিপণ দিয়ে তাদের ছাড়াও—যদিও তাদেরকে বের করে দেওয়া তোমাদের জন্য হারাম ছিল। তবে কি তোমরা কিতাবের একাংশে বিশ্বাস করো আর অন্য অংশ অস্বীকার করো? যারা এ কাজ করে, তাদের জন্য এ ছাড়া আর কী প্রতিফল হতে পারে—দুনিয়াতে লাঞ্ছনা, আর কিয়ামতের দিনে কঠিন শাস্তি? আর আল্লাহ তোমরা যা করো, তা থেকে বেখবর নন।”

86. এরাই আখেরাতের মূল্যে পার্থিব জীবন ক্রয় করেছে। তাদের শাস্তি লাঘব করা হবে না এবং তাদের সাহায্য করা হবে না।

87. “আর আমরা মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম এবং তার পর বহু রাসূল পাঠিয়েছিলাম। আর আমরা মরিয়মের পুত্র ঈসাকে স্পষ্ট প্রমাণ দিয়েছিলাম এবং তাকে পবিত্র আত্মা দ্বারা শক্তিশালী করেছিলাম। কিন্তু যখনই কোনো রাসূল তোমাদের কাছে এমন কিছু নিয়ে এলেন যা তোমাদের মনঃপূত হলো না, তখন তোমরা অহংকার করলে—কাউকে মিথ্যাবাদী বললে আর কাউকে হত্যা পর্যন্ত করলে।”

88. তারা বলে, “আমাদের অন্তরে সীলমোহর করা হয়েছে।” না! তাদের অবিশ্বাসের কারণে ঈশ্বর তাদের অভিশাপ দিয়েছেন। তারা খুব কম বিশ্বাস করে।

89. এবং যখন তাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি কিতাব এসেছিল, যা তাদের কাছে যা ছিল তার সত্যায়ন করে, যদিও এর আগে তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে বিজয়ের জন্য প্রার্থনা করত-যখন তা এসেছিল, তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। সুতরাং কাফেরদের উপর আল্লাহর অভিশাপ।

90. “অত্যন্ত নিকৃষ্ট হলো সেই মূল্য যার বিনিময়ে তারা নিজেদের বিক্রি করল—আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা অস্বীকার করে—শুধু এ কারণে যে, আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহ যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন। অতএব তারা একের পর এক আল্লাহর ক্রোধ ডেকে আনল। আর কাফেরদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি।

91. যখন তাদেরকে বলা হয়, “ঈশ্বর যা অবতীর্ণ করেছেন তাতে বিশ্বাস কর,” তারা বলে, “আমরা কেবলমাত্র আমাদের কাছে যা প্রেরিত হয়েছে তাতেই বিশ্বাস করি”। তারা এর পরে যা এসেছে তা প্রত্যাখ্যান করে, যদিও এটি সত্য, তাদের কাছে যা আছে তা নিশ্চিত করে। বল, ‘তোমরা যদি সত্যিকারের বিশ্বাসী হয়ে থাক তাহলে কেন তোমরা আল্লাহর নবীদের হত্যা করেছিলে?

92.  মূসা তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছিল, তারপরও তোমরা তার চলে যাওয়ার পর বাছুরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছিলে, তোমরা ছিলে সীমালঙ্ঘনকারী।

93. এবং যখন আমি তোমাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছিলাম এবং তোমাদের উপর পাহাড়কে উঁচু করে ধরেছিলাম—বলেছিলাম, “যা আমি তোমাদের দিয়েছি (তুরা/ কিতাপ), তা দৃঢ়ভাবে গ্রহণ করো এবং মনোযোগ দিয়ে শোনো।” তারা বলল, “আমরা শুনি, কিন্তু মানি না!” আর তাদের অন্তরে বাছুরের প্রতি প্রেম ভরে গিয়েছিল তাদের অবিশ্বাসের কারণে। বল, “কতই না মন্দ সে কাজ, যার দিকে তোমাদের ঈমান তোমাদের প্ররোচিত করে—যদি তোমরা সত্যিই মুমিন হও।

94. বলুন, “যদি পরকালের সেই আবাস আল্লাহর কাছে একমাত্র তোমাদেরই জন্য হয়ে থাকে—অন্য কারো জন্য নয়—তাহলে তোমরা মৃত্যুর কামনা করো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।”

95. কিন্তু তারা কখনোই মৃত্যুর কামনা করবে না—তাদের নিজেদের হাত যা অর্জন করেছে (অর্থাৎ তাদের গুনাহ ও অন্যায় কাজের কারণে)। আর আল্লাহ অন্যায়কারীদের (জালেমদের) খুব ভালোভাবেই জানেন।

96. তুমি অবশ্যই তাদেরকে দেখবে জীবনের প্রতি সবচেয়ে বেশি আসক্ত—মুশরিক (মূর্তিপূজক)দের চাইতেও বেশি। তাদের প্রত্যেকেই চাইবে হাজার বছর বাঁচতে। অথচ এত দীর্ঘ জীবনও তাদেরকে শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারবে না। আর আল্লাহ তাদের সকল কাজ ভালোভাবেই দেখেন।

97. বলুন, “যে-ই জিবরাঈলের শত্রু হোক না কেন—সে-ই তো আল্লাহর নির্দেশে কুরআনকে আপনার হৃদয়ে নাযিল করেছে, যা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের সত্যতা প্রমাণ করে, এবং এটি মুমিনদের জন্য পথপ্রদর্শক ও সুসংবাদ।”

98. যে কেউ আল্লাহর, তাঁর ফেরেশতাদের, তাঁর রাসূলদের, জিবরাঈল ও মিকাঈলের শত্রু হয়—তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফেরদের শত্রু।

99. আমি আপনার প্রতি সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নাযিল করেছি এবং যারা অবাধ্য তারাই তা অস্বীকার করবে।

100. এটা কি সত্য নয় যে তারা যতবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাদের কেউ না কেউ তা ভঙ্গ করেছে? প্রকৃতপক্ষে, তাদের অধিকাংশই সত্য বিশ্বাস করে না।

101. যখনই আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো রাসূল তাদের কিতাবে থাকা সত্যকে নিশ্চিত করে আসতেন, তখন তাদের একদল লোক এমনভাবে তাকে অস্বীকার করত যেন তারা সত্যকে জানেই না, আর আল্লাহর কিতাবকে নিজেদের পিঠের পেছনে ফেলে দিত।

102. তারা সেইসব জিনিস অনুসরণ করেছিল যা শয়তানরা সোলায়মানের যুগে জাদুবিদ্যা সম্পর্কে প্রচার করত। কিন্তু সোলায়মান কখনো অবিশ্বাস করেননি—বরং শয়তানরাই মানুষকে মিথ্যা জাদু শিখিয়েছিল। তারা এমন কিছু শিক্ষা দিত যা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিবাদ সৃষ্টি করত। কিন্তু তারা কারো কোনো ক্ষতি করতে পারত না আল্লাহর অনুমতি ছাড়া। মানুষ এমন কিছু শিখত যা তাদের জন্য ক্ষতির ছিল, কোনো উপকারের নয়। তারা তো জানত যে, যারা এসব কাজ করে তাদের পরকালে কোনো অংশ থাকবে না। নিজেদের আত্মাকে বিক্রি করে তারা কীই-না মন্দ চুক্তি করল!

103.। যদি তারা বিশ্বাস করত এবং ঈশ্বরকে ভয় করত, তবে তারা তাঁর কাছ থেকে আরও ভাল পুরস্কার পেত, তারা যদি বুঝতো!

104. হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর সঙ্গে কথা বলার সময় অশোভন বা রূঢ় শব্দ ব্যবহার কোরো না। সম্মানের সঙ্গে কথা বলো এবং মনোযোগ দিয়ে শোনো। নিশ্চয়ই কাফিররা কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে।

105. আহলে কিতাবের কাফিররা এবং মুশরিকরা চায় না যে আল্লাহ তোমাদের প্রতি রহমত ও হিদায়াত নাযিল করুন। কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন তাকেই তাঁর দয়ার জন্য মনোনীত করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহর দয়া সীমাহীন।

106. যখন আমরা একটি আয়াতকে আরেকটির পরিবর্তে দিই, তখন আল্লাহ ভালো জানেন কী তিনি নাযিল করছেন। কিন্তু তাদের কেউ বলে, “তুমি তো শুধু বানিয়ে বলছ।” অথচ তাদের অধিকাংশই বোঝে না।

107. তুমি কি জান না, আসমান ও জমিনের মালিকানা আল্লাহরই? আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোনো অভিভাবক বা সাহায্যকারী নেই।

108. তোমরা কি চাইছ তোমাদের রাসূলকে সেইভাবে প্রশ্ন করতে যেমন আগে মূসাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল? যে কেউ ঈমানকে কাফেরির সঙ্গে বদল করে, সে সোজা পথ থেকে অনেক দূরে চলে যায়।

109. আহলে কিতাবের অনেকেই চায় ঈমান আনার পর তোমাদের আবার কাফের বানিয়ে দিক—শুধু হিংসার কারণে, যদিও সত্য তাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। কিন্তু তোমরা ক্ষমা করো ও ধৈর্য ধরো, যতক্ষণ না আল্লাহ তাঁর ফয়সালা দেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।

110. নামাজ কায়েম করো এবং যাকাত দাও। তোমরা নিজেদের জন্য যে কোনো ভালো কাজ আগেই পাঠিয়ে দাও, তা আল্লাহর কাছে পাবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সব কাজ দেখেন।

111. তারা বলে, “জাহান্নাতে কেবল ইহুদী বা খ্রিষ্টানরাই যাবে।” এগুলো তাদেরই কল্পনা। বলো, “তোমরা প্রমাণ নিয়ে এসো, যদি সত্যবাদী হও।”

112. আসলে, যে আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করে এবং সৎকাজ করে, তার প্রতিদান তার প্রভুর কাছেই থাকবে। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।

113. ইহুদিরা বলে, “খ্রিষ্টানদের কোনো সত্য নেই।” আর খ্রিষ্টানরা বলে, “ইহুদিদের কোনো সত্য নেই।” অথচ উভয়েই কিতাব পড়ে। আর জ্ঞানহীনরাও তাদের মতোই কথা বলে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের মধ্যে যে বিষয়ে তারা মতভেদ করত, সে বিষয়ে ফয়সালা করবেন।

114. তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে যে আল্লাহর ঘরে তাঁর নাম স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং তা নষ্ট করার চেষ্টা করে? তাদের উচিত নয় সেখানে প্রবেশ করা, যদি না ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে যায়। তাদের জন্য ইহকালেই অপমান আছে, আর পরকালে আছে ভয়াবহ শাস্তি।

115. পূর্ব-পশ্চিম আল্লাহরই। তোমরা যেদিকে ফিরো, সেদিকেই আল্লাহর মুখমণ্ডল রয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমাহীন দয়ালু ও সর্বজ্ঞ।

116. তারা বলে, “আল্লাহর একটি পুত্র আছে।” তিনি পবিত্র! নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে সবই তাঁর। সবকিছুই তাঁর আনুগত্য করে।

117. তিনি নভোমন্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। যখন তিনি কিছু ঘটতে চান, তিনি শুধু বলেন, “হও!” এবং এটা হয়।

118. অজ্ঞরা বলে, “কেন ভগবান আমাদের সাথে কথা বলেন না বা কোন নিদর্শন দেখান না?” তাদের পূর্বের লোকেরাও তাই বলেছিল। তাদের হৃদয় একই রকম। কিন্তু যারা বিশ্বাস করে তাদের জন্য আমি সত্যকে স্পষ্ট করে দিয়েছি।

119. আমি আপনাকে সত্য সহ সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। যারা বিশ্বাস করতে অস্বীকার করে তাদের জন্য আপনাকে দোষ দেওয়া হবে না।

120. ইহুদী ও খ্রিস্টানরা আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না যদি না আপনি তাদের পথ অনুসরণ করেন। কিন্তু বলুন, “আল্লাহর নির্দেশনাই প্রকৃত নির্দেশনা।” আপনার কাছে জ্ঞান আসার পর যদি আপনি তাদের ইচ্ছার অনুসরণ করেন, তাহলে ঈশ্বরের কাছ থেকে আপনাকে সাহায্য বা রক্ষা করার মতো কেউ থাকবে না।

121. যাদের আমরা কিতাব দিয়েছি এবং তারা তা মনোযোগসহকারে ও যথাযথভাবে পাঠ করে—তারা-ই প্রকৃতপক্ষে এতে ঈমান আনে। আর যারা তা অস্বীকার করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।

122. হে বনী ইসরাইল! আমার সেই নিয়ামতের কথা স্মরণ করো, যা আমি তোমাদের উপর দান করেছি এবং আমি তোমাদেরকে বিশ্বের মানুষের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম।

123. ভয় করো সেই দিনের, যখন কোনো প্রাণ অন্য প্রাণের উপকারে আসবে না, কোনো মূল্য (ফিদয়া) গৃহীত হবে না, কোনো সুপারিশ কাজ দেবে না এবং কারো উদ্ধার হবে না আল্লাহর রহমত ছাড়া।

124. যখন ইব্রাহিমকে তাঁর প্রভু কিছু নির্দেশের মাধ্যমে পরীক্ষা করেছিলেন এবং তিনি সেগুলো পূর্ণ করেছিলেন, তখন আল্লাহ বললেন, “আমি তোমাকে মানুষের জন্য নেতা বানাবো।” ইব্রাহিম বললেন, “আমার সন্তানদের মধ্যেও কি?” আল্লাহ বললেন, “আমার অঙ্গীকার জালেমদের অন্তর্ভুক্ত নয়।”

125. আর আমরা কাবা-ঘরকে মানুষের জন্য নিরাপদ কেন্দ্র বানিয়েছি। তোমরা ইবরাহিমের দাঁড়াবার স্থানকে নামাজের জায়গা বানাও। আর আমরা ইবরাহিম ও ইসমাঈলকে আদেশ দিয়েছিলাম, “আমার ঘরকে পবিত্র রাখো তাদের জন্য, যারা তাওয়াফ করবে, এখানে ইতিকাফ করবে, রুকু করবে এবং সিজদা করবে।

১২৬. ইবরাহিম বললেন, “হে আমার প্রভু! এই ভূমি শান্তিময় কর এবং এর মানুষের জন্য ফলাদি দান কর—যারা তোমার প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাসী।” আল্লাহ বললেন, “যারা অবিশ্বাসী, তাদেরকেও আমি কিছু আশীর্বাদ দেব, কিন্তু পরে তারা আগুনের শাস্তি ভোগ করবে।”

১২৭. ইবরাহিম ও ইসমাঈল কাবা নির্মাণ করলেন এবং প্রার্থনা করলেন, “হে আমাদের প্রভু! এটিকে আমাদের পক্ষ থেকে গ্রহণ কর। তুমি সবশ্রোতা, সবজ্ঞ।”

১২৮. “আমাদের দুজনকেই তোমার প্রতি সমর্পিত কর এবং আমাদের সন্তানদের মধ্য থেকে এমন একটি সম্প্রদায় তৈরি কর যা তোমার প্রতি সমর্পিত থাকবে। আমাদের তোমার ইবাদত করার পথ দেখাও এবং আমাদের ক্ষমা কর। তুমি সর্বাধিক ক্ষমাশীল।”

১২৯. “হে আমাদের প্রভু! তাদের মধ্য থেকে তাদেরই একজন রাসূল পাঠাও, যেন তিনি তোমার আয়াতসমূহ তাদেরকে পাঠ করে শোনান, তাদেরকে কিতাব ও প্রজ্ঞা শিক্ষা দেন এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন। নিশ্চয়ই তুমি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান।”

১৩০. শুধুমাত্র যারা নির্বোধ, তারা ইবরাহিমের পথ ত্যাগ করবে। আমরা তাকে এই জগতে নির্বাচিত করেছি, এবং পরকালেও সে ধন্যদের মধ্যে থাকবে।

১৩১. যখন আল্লাহ তাকে বললেন, “সমর্পণ কর,” সে বলল, “আমি বিশ্বের প্রভুর কাছে সমর্পণ করছি।”

১৩২. “ইবরাহিম তাঁর সন্তানদের একই নির্দেশ দিয়েছিলেন, আর ইয়াকুব (জেকব)ও তাই করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: ‘হে আমার সন্তানরা! আল্লাহ তোমাদের জন্য এই ধর্ম নির্বাচন করেছেন। মুসলিম (যারা আল্লাহর প্রতি সমর্পিত) ছাড়া অন্য কিছু হয়ে মৃত্যুবরণ কোরো না।’”

১৩৩. তুমি কি তখন সেখানে ছিলে যখন ইয়াকুব মারা যাচ্ছিলেন এবং তার সন্তানদের বললেন, “আমার পরে তোমরা কী পূজা করবে?” তারা বলল, “আমরা আপনার প্রভুর পূজা করব—আপনার পিতৃপুরুষদের প্রভু: ইবরাহিম, ইসমাঈল এবং ইসাহাক—একই এক আল্লাহ। আমরা মুসলিম।”

১৩৪. সে একটি জাতি ছিল যা চলে গেছে। তাদের অর্জিত আছে তাদের, আর তোমাদের আছে তোমাদের। তাদের কাজের জন্য তোমাকে প্রশ্ন করা হবে না।

১৩৫. কেউ কেউ বলে, “মুদি বা খ্রিস্টান হও, যাতে সঠিক পথ পাও।” বল, “না, আমরা ইবরাহিমের বিশ্বাস অনুসরণ করি, যিনি সৎ এবং মূর্তিপূজারীর মধ্যে ছিলেন না।”

১৩৬. বল, “আমরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী এবং আমাদের কাছে প্রেরিতকৃত, ইবরাহিম, ইসমাঈল, ইসাহাক, ইয়াকুব ও তাদের গোত্রের প্রতি প্রেরিতকৃত এবং মূসা, ঈসা ও সকল নবীদের প্রতি প্রেরিতকৃত সমস্তকিছুর প্রতি বিশ্বাসী। আমরা তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করি না এবং আল্লাহর প্রতি সমর্পিত।”

১৩৭. যদি তারা তোমার মতো বিশ্বাস করে, তারা সঠিক পথেই আছে। কিন্তু যদি তারা মুখ ফিরায়, তারা বিভ্রান্ত, এবং আল্লাহ তোমাকে তাদের থেকে রক্ষা করবেন। তিনি সবশ্রোতা ও সবজ্ঞ।

১৩৮. “আমরা গ্রহণ করেছি আল্লাহর রঙ (ঈমানের ছাপ), আর আল্লাহর চেয়ে উত্তম রঙদাতা কে আছে? আমরা কেবল তাঁকেই উপাসনা করি।”

১৩৯. তাদের জিজ্ঞাসা কর, “তোমরা আল্লাহ নিয়ে আমাদের সঙ্গে তর্ক করছ যখন তিনি আমাদের প্রভু এবং তোমাদের প্রভু? আমরা আমাদের কাজের জন্য দায়ী, আর তোমরা তোমাদের জন্য কাজের জন্য দায়ী। আমরা কেবল তাঁকেই উপাসনা করি।”

১৪০. “তোমরা কি দাবি কর যে ইবরাহিম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাদের বংশধররা ইহুদি বা খ্রিস্টান ছিলেন? বল, ‘তোমরাই কি ভালো জানো, না আল্লাহ?’ আর আল্লাহ যা প্রকাশ করেছেন তা যে লুকায়, তার চেয়ে অন্যায়কারী আর কে হতে পারে?”

১৪১. সেই জাতি চলে গেছে। তাদের আছে যা তারা অর্জন করেছে, তোমাদের আছে যা তোমরা অর্জন করবে। তাদের কাজের জন্য তোমাকে প্রশ্ন করা হবে না।

১৪২. কিছু নির্বোধ মানুষ প্রশ্ন করবে, “তারা কেন প্রার্থনার দিক পরিবর্তন করল?” বল, “পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহর। তিনি যাকে ইচ্ছা পথ দেখান।”

১৪৩. “আমি তোমাদেরকে করেছি একটি মধ্যপন্থী (সুষম) সম্প্রদায়, যাতে তোমরা মানুষের উপর সাক্ষী হও এবং রাসূল তোমাদের উপর সাক্ষী হন। আমরা কিবলা পরিবর্তন করেছি—কে সত্যিই রাসূলের অনুসরণ করে তা পরীক্ষা করার জন্য। এটা কঠিন ছিল কিছু মানুষের জন্য, তবে যাদেরকে আল্লাহ পথ দেখিয়েছেন তারা ব্যতীত। আল্লাহ কখনো তোমাদের ঈমান নষ্ট করবেন না।”

১৪৪. আমরা তোমাকে আকাশের দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকাতে দেখি। তাই আমরা তোমাকে এমন একটি কিবলার দিকে ফিরিয়ে দেব যা তোমার জন্য সন্তোষজনক। তুমি মুখ ফিরিয়ে নাও পবিত্র মসজিদের (কাবার) দিকে, আর তোমরা যেখানে থাকো না কেন, তোমাদের মুখ সেই দিকেই ফেরাও। অবিশ্বাসীরা তর্ক-বিতর্ক করবেই, কিন্তু আল্লাহ তাদের কাজ থেকে অজ্ঞ নন।”

১৪৫. আপনি কিতাবধারীদের কাছে সব নিদর্শনই উপস্থাপন করুন না কেন, তারা কখনোই আপনার কিবলা অনুসরণ করবে না। আপনিও তাদের কিবলা অনুসরণ করবেন না। আর তারা একে অপরের কিবলাও অনুসরণ করে না। জ্ঞান আপনার কাছে আসার পর যদি আপনি তাদের ইচ্ছা অনুসরণ করেন, তবে অবশ্যই আপনি ভুলকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।”

১৪৬. “যারা কিতাব পেয়েছে তারা নবীর সত্যকে ততটাই স্পষ্টভাবে জানে, যতটা স্পষ্টভাবে তারা নিজেদের সন্তানদের চেনে। কিন্তু তাদের মধ্যে কিছু লোক সত্যকে লুকিয়ে রাখে।”

১৪৭. “সত্য তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে এসেছে, তাই সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। 

১৪৮. প্রত্যেকেরই একটি দিক আছে, যেদিকে সে মুখ ফিরিয়ে নেয়। অতএব তোমরা কল্যাণকর্মে একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা কর। তোমরা যেখানে-ই থাকো না কেন, আল্লাহ তোমাদের সবাইকে একত্র করবেন। নিশ্চয়ই তিনি সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান।

১৪৯. তুমি যেখানেই যাও না কেন, তোমার মুখ ফিরিয়ে দাও পবিত্র মসজিদের (কাবার) দিকে। এটাই তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে সত্য, আর আল্লাহ তোমাদের কর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ নন।

১৫০. অতএব তুমি কাবার দিকে মুখ ফেরাও, আর যেখানে-যেখানেই থাকো তোমরা, নামাজের সময় তারই দিকে মুখ ফিরিয়ে দাও। এতে মানুষের তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো যুক্তি থাকবে না—অন্যায়কারীদের ছাড়া। অতএব তাদের ভয় করো না, আমাকেই ভয় করো। আমি আমার অনুগ্রহ তোমাদের উপর পূর্ণ করব, যাতে তোমরা সঠিক পথে পরিচালিত হও।”

১৫১. যেমন আমরা তোমাদের মধ্য থেকে একজন রাসূল পাঠিয়েছি, যিনি তোমাদের কাছে আমাদের আয়াতসমূহ পাঠ করেন, তোমাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন, তোমাদেরকে কিতাব ও প্রজ্ঞা শিক্ষা দেন এবং তোমাদেরকে এমন জ্ঞান দান করেন যা তোমরা পূর্বে জানতেই না।

১৫২. অতএব তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমি তোমাদের স্মরণ করব। আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, আর অকৃতজ্ঞ হয়ো না।

১৫৩. হে ঈমানদারগণ! ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গী।

১৫৪. আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাদেরকে মৃত বলো না। না—তারা জীবিত; তবে তোমরা তা উপলব্ধি কর না।

১৫৫. আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের ক্ষতি, জীবন ও ফসলহানির মাধ্যমে। আর সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদেরকে—

১৫৬. যারা বিপদে পড়লে বলে, “নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহরই, এবং অবশ্যই তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করব।”

১৫৭. তাদেরই জন্য আছে তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে আশীর্বাদ ও করুণা। তারাই সত্যিকার পথপ্রাপ্ত।

১৫৮. নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। তাই যে কেউ হজ্ব অথবা উমরাহ করে এবং তাদের মধ্য দিয়ে পরিভ্রমণ করে, তার কোনো পাপ নেই। আর যে কেউ সানন্দে কল্যাণকর্ম করে—আল্লাহ কৃতজ্ঞ এবং সর্বজ্ঞ।

১৫৯. “যারা স্পষ্ট নির্দেশনা ও সঠিক পথকে আড়াল করে, যা আমি কিতাবে মানুষের জন্য সুস্পষ্ট করে দিয়েছি—আল্লাহ তাঁদের অভিসম্পাত করেন, আর অভিসম্পাতকারীরাও তাঁদের অভিসম্পাত করে।”

১৬০. তবে যারা তাওবা করে, নিজেদের সংশোধন করে এবং সত্যকে প্রকাশ করে—আমি অবশ্যই তাদের তাওবা কবুল করব। আমি পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

১৬১. আর যারা কুফরি (সত্যকে অস্বীকার) করেছে এবং সেই অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করেছে—তাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ, ফেরেশতাদের অভিশাপ এবং সমস্ত মানুষের অভিশাপ বর্তাবে।

১৬২. তারা অভিশাপে চিরকাল অবস্থান করবে। তাদের শাস্তি হালকা করা হবে না, এবং তাদেরকে কোনো অবকাশও দেওয়া হবে না।

১৬৩. তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য। তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি পরম দয়ালু, পরম করুণাময়।

১৬৪. নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের আবর্তনে, সাগরে ভেসে চলা জাহাজসমূহে যা মানুষের উপকারে বহন করে, বৃষ্টি দ্বারা যা আল্লাহ আসমান থেকে বর্ষণ করেন এবং এর মাধ্যমে মৃত জমিনকে জীবিত করেন, তাতে বিচরণকারী নানা প্রাণীতে, বাতাসের পরিবর্তনে, আসমান ও জমিনের মাঝখানে স্থিত মেঘে—নিশ্চয়ই রয়েছে নিদর্শন তাদের জন্য যারা চিন্তা করে।

১৬৫. মানুষদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর মতোই ভালোবাসে। কিন্তু যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহকে আরও অধিক ভালোবাসে। যদি সেই জালিমরা (সত্য-অস্বীকারকারী) শাস্তি প্রত্যক্ষ করত এবং উপলব্ধি করত যে সমস্ত শক্তি আল্লাহরই এবং আল্লাহর শাস্তি কঠিন!

১৬৬. যেদিন পথপ্রদর্শকরা অনুসারীদের থেকে বিমুখ হবে, আর তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে, এবং তাদের মধ্যকার সমস্ত বন্ধন ছিন্ন হয়ে যাবে—

১৬৭. তখন অনুসারীরা বলবে, “হায়, যদি আমাদের আরেকটি সুযোগ থাকত, তবে আমরাও তাদের থেকে বিমুখ হতাম, যেমন তারা আমাদের থেকে বিমুখ হয়েছে।” এভাবেই আল্লাহ তাদের কর্মসমূহকে তাদের জন্য অনুশোচনায় পরিণত করেন। আর তারা আগুন থেকে কখনোই মুক্তি পাবে না।

১৬৮. হে মানুষ! পৃথিবীতে যা হালাল ও পবিত্র, তা খাও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।

১৬৯. সে তো তোমাদেরকে আদেশ দেয় মন্দ ও অশ্লীল কাজ করতে এবং আল্লাহ সম্পর্কে এমন কিছু বলতে, যা তোমরা জানো না।

১৭০. আর যখন তাদেরকে বলা হয়, “তোমরা অনুসরণ কর আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন,” তখন তারা বলে, “না, আমরা তো অনুসরণ করি যা আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের করতে দেখেছি।” যদিও তাদের পূর্বপুরুষরা কিছুই বুঝত না এবং তারা সৎপথপ্রাপ্তও ছিল না?

১৭১. অবিশ্বাসীদের দৃষ্টান্ত সেই রাখালের মতো, যে পশুদেরকে ডাকে—কিন্তু তারা শোনে কেবল আওয়াজ আর চিৎকার। তারা বধির, বোবা আর অন্ধ; তাই তারা কিছুই অনুধাবন করে না।

১৭২. হে মুমিন (দৃঢ় বিশ্বাসী) গণ! আমি তোমাদের জন্য যে উত্তম বস্তুসমূহ দান করেছি, তা আহার করো এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হও—যদি সত্যিই তোমরা তাঁর উপাসক হও।

১৭৩. তিনি তোমাদের জন্য হারাম করেছেন কেবল মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের মাংস এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে উৎসর্গকৃত পশু। তবে যদি কেউ বাধ্য হয়—কোনো আকাঙ্ক্ষা বা সীমালঙ্ঘন ছাড়াই—তাহলে তার উপর কোনো পাপ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

১৭৪. যারা কিতাবে অবতীর্ণ আল্লাহর বাণী গোপন করে ক্ষুদ্র মূল্যে তা বিক্রি করে—তারা তো নিজেদের উদরে আগুন ভরছে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের পবিত্রও করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

১৭৫. তারাই হলো তারা—যারা হিদায়াতের বিনিময়ে পথভ্রষ্টতা ক্রয় করেছে, ক্ষমার বদলে শাস্তি বেছে নিয়েছে। কতই না ভয়াবহ তাদের এই ক্রয়কর্ম!

১৭৬. এটা এজন্য যে, আল্লাহ সত্যসহ কিতাব নাযিল করেছেন, অথচ যারা এ বিষয়ে মতবিরোধ করেছে, তারা গভীর বিভ্রান্তিতে পতিত হয়েছে।

১৭৭. নেকী শুধু এ নয় যে, তোমরা মুখ ফিরিয়ে পূর্ব বা পশ্চিমের দিকে মুখ করবে। বরং নেকী হলো—আল্লাহ, আখেরাতের দিন, ফেরেশতাগণ, কিতাবসমূহ ও নবীগণের প্রতি বিশ্বাস; আল্লাহর ভালোবাসায় ধন-সম্পদ দান করা—আত্মীয়, ইয়াতিম, অভাবী, মুসাফির, ভিক্ষুক এবং দাস-মুক্তির জন্য; নামাজ কায়েম করা; যাকাত প্রদান করা; প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা; বিপদ, দুঃখ ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণ করা। এরা-ই সত্যবাদী, আর তারাই মুত্তাকী (“আল্লাহভীরু, ধর্মপরায়ণ)।

১৭৮. হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য হত্যার ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নির্ধারিত হয়েছে—স্বাধীন ব্যক্তির জন্য স্বাধীন, দাসের জন্য দাস, নারীর জন্য নারী। তবে যদি নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে ক্ষমা করা হয়, তবে উচিতভাবে অনুসরণ করবে এবং উত্তমভাবে ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে। এটি তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এক বিশেষ দয়া। এর পরও যে সীমা লঙ্ঘন করবে, তার জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।

১৭৯. হে বোধসম্পন্ন মানুষ! এই কিসাসের বিধানেই তোমাদের জন্য রয়েছে জীবন—যাতে তোমরা সীমালঙ্ঘন থেকে বিরত থাকতে পারো।

১৮০. তোমাদের জন্য বিধান করা হয়েছে—যখন মৃত্যু ঘনিয়ে আসে এবং সম্পদ রেখে যাও, তখন ন্যায্যভাবে পিতা-মাতা ও নিকট আত্মীয়দের জন্য উইল করবে। এটি মুত্তাকীদের উপর এক কর্তব্য।

১৮১. এরপর যদি কেউ উইল শোনার পর তা পরিবর্তন করে, তবে এর পাপ তাদের উপর, যারা পরিবর্তন করেছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

১৮২. কিন্তু যদি কেউ আশঙ্কা করে যে উইলকারী ভ্রান্ত হয়েছে বা অন্যায় করেছে, এবং সে মীমাংসা করে দেয়—তবে তার উপর কোনো পাপ নেই। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

১৮৩. হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে—যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর—যাতে তোমরা তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জন করতে পারো।

১৮৪. নির্দিষ্ট কয়েকটি দিন সিয়াম (রোজা ) পালন করবে। তবে যদি কেউ অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে, তবে অন্য দিনে সমান সংখ্যক রোজা রাখবে। আর যারা একেবারেই রাখতে অক্ষম, তারা প্রতিদিনের জন্য এক অভাবীকে খাদ্য দেবে। আর যে স্বেচ্ছায় বেশি কল্যাণ করে, তার জন্য তা উত্তম। তবুও যদি জান, তবে রোজা তোমাদের জন্য সর্বোত্তম।

১৮৫. রমজান মাস হলো সে মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে—মানুষের জন্য পথপ্রদর্শন হিসেবে, হিদায়াত ও সত্যের সুস্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে। তাই যে এ মাস পাবে, সে অবশ্যই এতে রোজা রাখবে। আর যে অসুস্থ বা সফরে থাকে, সে পরে সমান সংখ্যক রোজা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ চান, কষ্ট চান না। তিনি চান তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করো, তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন তার জন্য আল্লাহকে মহিমান্বিত করো এবং কৃতজ্ঞ হও।

১৮৬. আমার বান্দারা যদি তোমাকে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে, তবে বলে দাও—আমি নিকটবর্তী। যে আমার কাছে প্রার্থনা করে, আমি তার আহ্বানে সাড়া দিই। তাই তারা যেন আমার আহ্বানে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি ঈমান আনে, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে।

১৮৭. রোজার রাতগুলোতে তোমাদের স্ত্রীর সঙ্গে মিলন বৈধ করা হলো। তারা তোমাদের জন্য পোশাকস্বরূপ, আর তোমরা তাদের জন্য পোশাকস্বরূপ। আল্লাহ জানেন, তোমরা গোপনে তা করছিলে—তাই তিনি তোমাদের ক্ষমা করলেন। এখন তাদের সাথে মিলিত হও, আর আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে রেখেছেন তা কামনা করো। খাও এবং পান করো, যতক্ষণ না ভোরের শুভ্র রেখা রাত্রির অন্ধকার রেখা থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তারপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করো। তবে ই‘তিকাফের সময় মসজিদে অবস্থানকালে স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়ো না। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা—অতএব এগুলো অতিক্রম করো না। আল্লাহ তাঁর নিদর্শনসমূহ এভাবে মানুষের কাছে স্পষ্ট করেন, যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে।

১৮৮. তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না এবং মানুষের সম্পদ থেকে অন্যায়ভাবে কিছু পাওয়ার জন্য বিচারকদের ঘুষ দিও না—যখন তোমরা জানো যে, এ কাজ পাপ।

১৮৯. তারা তোমাকে চাঁদের নতুন রূপ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও—এগুলো মানুষের জন্য সময় নির্ধারণের নিদর্শন, এবং হজ্বের সময়সূচির চিহ্ন। নেকী এ নয় যে, তোমরা ঘরে প্রবেশ করবে পেছন দিক দিয়ে। বরং নেকী হলো তাকওয়া। অতএব ঘরে প্রবেশ করবে সঠিক দরজা দিয়ে। আর আল্লাহকে ভয় করো—যাতে তোমরা সফল হতে পারো।

১৯০. আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো তাদের সাথে, যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে। কিন্তু সীমা অতিক্রম করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না।

১৯১। তোমরা তাদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, এবং যেখান থেকে তারা তোমাদের বের করে দিয়েছিল, তোমরাও তাদের সেখান থেকে বের কর। নিপীড়ন হত্যা অপেক্ষা কঠিনতর। কিন্তু পবিত্র মসজিদের নিকটে তোমরা তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে না, যদি না তারা সেখানে তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে। আর যদি তারা যুদ্ধ করে, তবে তোমরাও তাদের সঙ্গে যুদ্ধ কর। এটাই কাফেরদের প্রতিফল।

১৯২. কিন্তু তারা যদি বিরত থাকে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

১৯৩. তোমরা তাদের সঙ্গে যুদ্ধ কর যতক্ষণ না ফিতনা (নিপীড়ন) অবসান হয় এবং আল্লাহর জন্যই দীন প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু তারা যদি বিরত থাকে, তবে আর যুদ্ধ নেই—অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছাড়া।

১৯৪. পবিত্র মাসের প্রতিদান পবিত্র মাসেই, আর লঙ্ঘনের প্রতিদান সমানভাবে। অতএব, কেউ তোমাদের আক্রমণ করলে তোমরাও তার সঙ্গে একইভাবে প্রতিশোধ নাও। তবে আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ আল্লাহ মুত্তাকীদের সঙ্গেই আছেন।

১৯৫. আল্লাহর পথে ব্যয় কর এবং নিজেদেরকে নিজেদের হাতে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না। সৎকর্ম কর—আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।

১৯৬. আল্লাহর জন্য হজ্জ ও উমরা সম্পূর্ণ কর। যদি বাধাপ্রাপ্ত হও, তবে যা কোরবানি সহজলভ্য তাই দাও। কোরবানি তার নির্দিষ্ট স্থানে নাপৌঁছানো পর্যন্ত মাথা মুন্ডন ((চুল কামিয়ে ফেলে বা ছোট করা) করো না। আর যদি কেউ অসুস্থ হয় বা মাথায় কষ্ট থাকে, তবে সে রোজা রাখবে, অথবা দান করবে, অথবা কোরবানি দেবে। যখন তোমরা নিরাপদে থাকবে, তখন যে ব্যক্তি হজ্জের পূর্বে উমরা (হজ্জ্ব মাস ব্যতিত করা হজ্জ্ব) করতে চায়, তার জন্য সহজলভ্য কোরবানি বাধ্যতামূলক। আর যদি সে তা না পায়, তবে হজ্জের সময় তিন দিন এবং প্রত্যাবর্তনের পর সাত দিন রোজা রাখবে—মোট দশ দিন। এটি তাদের জন্য, যারা মসজিদুল হারামের পার্শ্ববর্তী অধিবাসী নয়। আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ আল্লাহ শাস্তিতে কঠোর।

১৯৭. হজ্জের মাসগুলো নির্দিষ্ট। যে ব্যক্তি ঐ মাসগুলোতে হজ্জ করার সংকল্প করে, তার জন্য হজ্জের সময় অশ্লীল কথা, অসদাচরণ ও ঝগড়া-বিবাদ নেই। আর তোমরা যা-ই ভালো কাজ করো—আল্লাহ তা জানেন। তোমরা প্রস্তুতি গ্রহণ কর, আর সর্বোত্তম প্রস্তুতি হলো তাকওয়া। কাজেই হে জ্ঞানী লোকেরা! আমার তাকওয়া অবলম্বন কর।

১৯৮. হজ্জের সময় জীবিকা অনুসন্ধান ও আল্লাহর অনুগ্রহ খোঁজার মধ্যে কোনো দোষ নেই। যখন তোমরা আরাফাত থেকে ফিরে আসো, তখন মাশ‘আরুল হারামে আল্লাহকে স্মরণ করো। যেভাবে তিনি তোমাদের পথপ্রদর্শন করেছেন, সেভাবে স্মরণ করো—আগে তো তোমরা পথভ্রষ্ট ছিলে।

১৯৯. তারপর তোমরা সেখান থেকে বের হও যেখান থেকে অন্যরা বের হয়, এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

২০০. যখন তোমরা আনুষ্ঠানিক কাজ শেষ কর, তখন তোমরা আল্লাহকে স্মরণ কর যেমন তোমরা পূর্বে তোমাদের পূর্বপুরুষদের স্মরণ করতে, বরং আরও অধিকভাবে। আর মানুষের মধ্যে কেউ কেউ বলে, “হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে এ দুনিয়াতে কল্যাণ দাও।” কিন্তু তাদের জন্য আখেরাতে কোনো অংশ নেই।

২০১. আর কেউ কেউ বলে, “হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দাও এবং আখেরাতেও কল্যাণ দাও, আর আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করো।”

২০২. এদেরই জন্য রয়েছে তাদের উপার্জনের অংশ। আর আল্লাহ হিসাব গ্রহণে দ্রুত।

২০৩. নির্ধারিত দিনে তোমরা আল্লাহকে স্মরণ কর। কেউ যদি দুই দিন পর তাড়াতাড়ি চলে যায়, তার জন্য কোনো পাপ নেই। আর কেউ যদি থেকে যায়, তার জন্যও কোনো পাপ নেই—যতক্ষণ সে আল্লাহকে ভয় করে। কাজেই আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ যে তোমরা তাঁর কাছেই একত্রিত হবে।

২০৪. মানুষের মধ্যে এমন কেউ আছে, যাদের দুনিয়ার জীবনের কথা তোমাদেরকে বিস্মিত করে। তারা তাদের অন্তরের সাক্ষী হিসেবে আল্লাহকে ডাকে, অথচ তারা তোমাদের সবচেয়ে ভয়ানক শত্রু।

২০৫. যখন তারা ক্ষমতা অর্জন করে, তখন পৃথিবীতে অনিষ্ট সৃষ্টি করে, ফসল ও জীবজন্তু ধ্বংস করে। আল্লাহ অনিষ্টকে ভালোবাসেন না।

২০৬. আর যখন তাদের বলা হয়, “আল্লাহকে ভয় করো,” তখন তারা অহংকারে আচ্ছন্ন হয়। তাদের জন্য জাহান্নামই যথেষ্ট—অতি নিকৃষ্ট আশ্রয়।

২০৭. আর মানুষের মধ্যে এমনও কেউ আছে, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজেদেরকে বিক্রি করে দেয়। আর আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অতি দয়ালু।

২০৮. হে ঈমানদারগণ! তোমরা সম্পূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।

২০৯. স্পষ্ট নির্দেশনা আসার পর যদি তোমরা পিছলে যাও, তবে জেনে রাখ আল্লাহ মহাশক্তিশালী, প্রজ্ঞাময়।

২১০. তারা কি অপেক্ষা করছে যে আল্লাহ নিজে মেঘের ছায়ায় ফেরেশতাদের নিয়ে আসবেন এবং বিষয়টি চূড়ান্ত হবে? সমস্ত বিষয় আল্লাহর কাছেই প্রত্যাবর্তিত হবে।

২১১. বনী ইসরাঈলকে জিজ্ঞেস কর, আমি তাদের কত স্পষ্ট নিদর্শন দিয়েছিলাম। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অনুগ্রহ তার নিকটে আসার পর তা পরিবর্তন করে, নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তিতে কঠোর।

২১২. দুনিয়ার জীবন অবিশ্বাসীদের কাছে শোভনীয় করে তোলা হয়েছে, আর তারা ঈমানদারদের উপহাস করে। কিন্তু যারা আল্লাহকে ভয় করে, কিয়ামতের দিনে তারা তাদের ওপরে থাকবে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সীমাহীন রিজিক দান করেন।

২১৩. সমগ্র মানবজাতি একসময় এক সম্প্রদায় ছিল। অতঃপর আল্লাহ সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে নবীগণকে পাঠালেন, এবং তাদের সঙ্গে সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করলেন, যাতে তারা মানুষের মধ্যে তাদের মতভেদের বিচার করতে পারে। কিন্তু যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল, তারাই স্পষ্ট প্রমাণ আসার পরও হিংসার কারণে মতভেদ করল। ফলে আল্লাহ তাঁর ইচ্ছায় মুমিনদেরকে সেই সত্যের পথে পরিচালিত করলেন, যাতে অন্যরা মতভেদ করেছিল। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন।

২১৪. তোমরা কি মনে কর তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের মতো পরীক্ষিত হবে না? তাদের উপর দারিদ্র্য, কষ্ট নেমে এসেছিল, তারা প্রচণ্ডভাবে কাঁপানো হয়েছিল—এমনকি তাদের সঙ্গে থাকা নবীও বলেছিলেন: “আল্লাহর সাহায্য কবে আসবে?” জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী।

২১৫. তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে, তারা কী ব্যয় করবে? বল: তোমরা যে কল্যাণ ব্যয় করো, তা যেন পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম, দরিদ্র ও মুসাফিরের জন্য হয়। আর তোমরা যা-ই কল্যাণ করো, আল্লাহ তা ভালোমতো জানেন।

২১৬. তোমাদের জন্য যুদ্ধ নির্ধারিত হয়েছে, যদিও তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। হতে পারে তোমরা এমন কিছু অপছন্দ করছো যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর, আর এমন কিছু ভালোবাসছো যা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ জানেন, আর তোমরা জানো না।

২১৭. তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে পবিত্র মাসে যুদ্ধ সম্পর্কে। বল: এতে যুদ্ধ করা এক মহাপাপ; তবে আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করা, তাঁর প্রতি অবিশ্বাস করা, মসজিদুল হারামে প্রবেশে বাধা দেওয়া এবং মানুষকে সেখান থেকে উৎখাত করা — এসব আল্লাহর নিকট আরও গুরুতর অপরাধ। নিপীড়ন হত্যা অপেক্ষা ভয়াবহতর। তারা তোমাদের সঙ্গে ক্রমাগত যুদ্ধ করতে থাকবে, যতক্ষণ না তারা তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে নিতে সক্ষম হয়। আর যে কেউ দ্বীন ত্যাগ করে অবিশ্বাসী অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে, তার সমস্ত কর্ম ব্যর্থ হবে ইহকাল ও পরকালে। তারাই হবে জাহান্নামের অধিবাসী, যেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে।

২১৮. যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে সংগ্রাম করেছে — তারা আল্লাহর দয়ার আশাবাদী। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

২১৯. তারা তোমাকে মদ ও জুয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করে। বল: এতে আছে মহাপাপ এবং মানুষের জন্য কিছু উপকারও; কিন্তু এর পাপ উপকার অপেক্ষা অধিকতর। তারা আরও জিজ্ঞেস করে তারা কী ব্যয় করবে। বল: প্রয়োজনের অতিরিক্ত যা থাকে, তাই ব্যয় কর। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর নিদর্শনসমূহ সুস্পষ্ট করে দেন, যাতে তোমরা চিন্তা কর।

২২০. দুনিয়া ও আখিরাত সম্বন্ধে। তারা তোমাকে এতিমদের বিষয়ে জিজ্ঞেস করে। বল: তাদের জন্য সংশোধন করাই উত্তম। আর যদি তোমরা তাদের সঙ্গে নিজের বিষয় মিশিয়ে নাও, তবে তারা তোমাদেরই ভ্রাতা। আল্লাহ জানেন কে অনিষ্ট করতে চায় এবং কে কল্যাণ কামনা করে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে কষ্টে ফেলতে পারতেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

২২১. মুশরিক নারীদের সঙ্গে বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। একজন ঈমানদার দাসী মুশরিকা অপেক্ষা উত্তম, যদিও সে তোমাদের নিকট আকর্ষণীয় মনে হয়। এবং তোমাদের কন্যাদেরও মুশরিক পুরুষদের সঙ্গে বিয়ে দিও না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। একজন ঈমানদার দাস মুশরিক অপেক্ষা উত্তম, যদিও সে তোমাদের কাছে প্রিয় হয়। এরা ডাকে আগুনের দিকে, আর আল্লাহ নিজ অনুমতিক্রমে আহ্বান করেন জান্নাত ও ক্ষমার দিকে। এভাবেই আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ মানুষের জন্য স্পষ্ট করে দেন, যাতে তারা স্মরণ করে।

২২২. তারা তোমাকে ঋতুস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বল: এটি এক অশুচিতা। অতএব ঋতুকালে নারীদের থেকে দূরে থাকো এবং তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের কাছে যেয়ো না। আর তারা যখন শুচি হয়ে যাবে, তখন তাদের কাছে আসো, যেমন আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ভালোবাসেন তওবাকারীকে এবং ভালোবাসেন পবিত্রতাপ্রিয়দের।

২২৩. তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্য এক শস্যক্ষেত্রস্বরূপ। সুতরাং তোমরা যেভাবে ইচ্ছা নিজেদের ক্ষেত্রের দিকে আসতে পার। তবে নিজেদের জন্য কল্যাণকর কাজ কর। আর আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, তোমরা তাঁর সাক্ষাৎ লাভ করবে। আর মুমিনদেরকে সুসংবাদ দাও।

২২৪. সৎকর্ম করা, আল্লাহকে ভয় করা এবং মানুষের মধ্যে মিল-মিশ করানো থেকে বিরত থাকতে আল্লাহর নামকে তোমাদের শপথের অজুহাত কোরো না। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

২২৫. তোমাদের অনর্থক উচ্চারিত শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না, বরং তিনি পাকড়াও করবেন তোমাদের অন্তরের উদ্দেশ্য অনুযায়ী। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।

২২৬. যারা তাদের স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে থাকার শপথ করে, তাদের জন্য চার মাস পর্যন্ত অবকাশ আছে। অতঃপর যদি তারা ফিরে আসে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।

২২৭. আর যদি তারা তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

২২৮. তালাকপ্রাপ্তা নারীরা তিনটি ঋতুচক্র পর্যন্ত নিজেদেরকে অপেক্ষায় রাখবে। যদি তারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী হয়, তবে তাদের গর্ভে যা আছে তা গোপন করা তাদের জন্য বৈধ নয়। আর তাদের স্বামীগণ যদি পুনর্মিলন করতে চায়, তবে এ সময়ে তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার অধিকার রাখে। এবং নারীদের জন্য রয়েছে পুরুষদের ন্যায় অধিকার, যা প্রথা অনুযায়ী। তবে পুরুষদের রয়েছে তাদের উপর এক ধাপ শ্রেষ্ঠত্ব। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

২২৯. তালাক দু’বার দেওয়া যায়; এরপর হয় ভদ্রভাবে ধরে রাখা, নয়তো সদ্ভাবে বিদায় দেওয়া। আর তোমরা তাদেরকে যা দান করেছ, তার কিছুই ফেরত নেওয়া তোমাদের জন্য বৈধ নয়, যদি না তারা উভয়ে আশঙ্কা করে যে আল্লাহর বিধান মেনে চলতে পারবে না। যদি তারা আল্লাহর বিধান অমান্য করার ভয় পায়, তবে নারীর মুক্তির বিনিময়ে কিছু ফেরত নেওয়াতে তাদের উভয়ের জন্যই দোষ নেই। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা, সুতরাং এগুলো লঙ্ঘন করো না। আর যারা আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করে, তারাই জালিম।

২৩০. অতঃপর যদি সে (স্বামী) তাকে তৃতীয়বার তালাক দেয়, তবে এর পর আর সে তার জন্য বৈধ নয়, যতক্ষণ না সে অন্য স্বামীকে বিয়ে করে। আর যদি দ্বিতীয় স্বামীও তাকে তালাক দেয়, তবে উভয়ের জন্যই কোনো দোষ নেই, যদি তারা মনে করে যে আল্লাহর সীমা রক্ষা করে একত্রে থাকতে পারবে। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা, যা তিনি জ্ঞানীদের জন্য সুস্পষ্ট করে দেন।

২৩১. আর যখন তোমরা নারীদের তালাক দাও এবং তারা নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে যায়, তখন তাদেরকে হয় ভদ্রভাবে ধরে রাখো, নয়তো সদ্ভাবে বিদায় দাও। তাদেরকে কষ্ট দেওয়ার জন্য ধরে রেখো না, যাতে তোমরা সীমা লঙ্ঘন করো। আর যারা এরূপ কাজ করে, তারা নিজেদের উপরই অত্যাচার করে। আর আল্লাহর আয়াতগুলোকে তামাশা করে তুলো না। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সেই কিতাব ও প্রজ্ঞার কথা স্মরণ করো, যা তিনি তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন, যাতে তোমাদেরকে নসিহত (উপদেশ) করা হয়। আর আল্লাহকে ভয় করো এবং জেনে রাখো, আল্লাহ সর্বজ্ঞ।

২৩২. আর যখন তোমরা নারীদের তালাক দাও এবং তারা তাদের নির্ধারিত সময় পূর্ণ করে ফেলে, তখন যদি তারা তাদের ইচ্ছামতো স্বামী গ্রহণ করতে চায়, তবে তাদেরকে নতুন বিয়ে করতে বাধা দিও না, যদি তা প্রথা অনুযায়ী হয়। এ শিক্ষা দেওয়া হয় তাদেরকে, যারা তোমাদের মধ্যে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী। এটি তোমাদের জন্য অধিকতর পবিত্র ও নির্মল। আর আল্লাহ জানেন, অথচ তোমরা জানো না।

২৩৩. মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুই বছর পর্যন্ত দুধ পান করাবে, যদি কেউ পুরো সময়কাল পূর্ণ করতে চায়। আর সন্তানের পিতা মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব বহন করবে, যথাযথ প্রথা অনুযায়ী। কাউকে তার সামর্থ্যের বাইরে চাপ দেওয়া হবে না। কোনো মাকে তার সন্তানের কারণে কষ্ট দেওয়া হবে না, এবং কোনো পিতাকেও তার সন্তানের কারণে কষ্ট দেওয়া হবে না। আর উত্তরাধিকারীর উপরও একই দায়িত্ব বর্তায়। যদি উভয় পক্ষ পরামর্শক্রমে ও সম্মতিতে শিশুকে দুধ ছাড়াতে চায়, তবে তাতে কোনো দোষ নেই। আর যদি তোমরা তোমাদের সন্তানকে অন্য কাউকে দুধ পান করাতে চাও, তবে যথাযথ পারিশ্রমিক প্রদান করলে তাতেও কোনো পাপ নেই। আর আল্লাহকে ভয় করো এবং জেনে রাখো, তোমরা যা করো আল্লাহ তা দেখছেন।

২৩৪. আর তোমাদের মধ্য হতে যারা মৃত্যুবরণ করে এবং স্ত্রী রেখে যায়, তাদের স্ত্রীরা নিজেদেরকে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় রাখবে। অতঃপর যখন তারা নির্ধারিত সময় পূর্ণ করবে, তখন তারা নিজের সম্পর্কে যা কিছু প্রথা অনুযায়ী করে, তাতে তোমাদের উপর কোনো দোষ নেই। আর আল্লাহ তোমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত।

২৩৫. আর তোমরা যদি এমন নারীদের প্রতি বিয়ের প্রস্তাবের ইঙ্গিত দাও অথবা মনে মনে তা লুকিয়ে রাখো, তবে তাতে তোমাদের জন্য কোনো পাপ নেই। আল্লাহ জানেন তোমরা তাদের কথা মনে রাখবে। তবে গোপনে প্রতিশ্রুতি দিও না, বরং ভদ্রভাবে কথা বলো। আর নির্ধারিত সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিয়ের চুক্তি সম্পাদন কোরো না। আর জেনে রাখো, আল্লাহ তোমাদের মনের কথা জানেন। অতএব তাঁকে ভয় করো এবং জেনে রাখো, আল্লাহ ক্ষমাশীল, সহনশীল।

২৩৬. যদি তোমরা নারীদের স্পর্শ করার আগে তালাক দাও, অথচ তাদের জন্য মোহর নির্ধারণ না করে থাকো, তবে তাতেও কোনো দোষ নেই। তবে তাদের জন্য কিছু ভরণপোষণ দাও, সামর্থ্যবান ব্যক্তি তার সামর্থ্য অনুযায়ী এবং অল্প সামর্থ্যবান তার সামর্থ্য অনুযায়ী, প্রথা অনুযায়ী। এটা ন্যায়পরায়ণদের জন্য এক কর্তব্য।

২৩৭. আর যদি তোমরা তালাক দাও স্পর্শ করার আগে, অথচ তাদের জন্য মোহর নির্ধারণ করে রেখেছিলে, তবে যা নির্ধারণ করেছিলে তার অর্ধেক তাদের প্রাপ্য — যদি না তারা ক্ষমা করে দেয়, অথবা সেই ব্যক্তি ক্ষমা করে যে বিয়ের বন্ধন নিজের হাতে রেখেছে। আর ক্ষমা করা তোমাদের জন্য অধিকতর নিকটবর্তী তাকওয়ার। আর তোমরা পরস্পরের মধ্যে অনুগ্রহ বিসর্জন কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের কাজকর্ম সম্পর্কে সম্যক অবহিত।

২৩৮. তোমরা সালাতসমূহের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষত মধ্যবর্তী সালাতের প্রতি। আর আল্লাহর সামনে বিনীতভাবে দাঁড়াও।

২৩৯. যদি তোমরা ভীত হও, তবে হাঁটতে হাঁটতে বা সওয়ার অবস্থায় নামাজ আদায় করো। আর যখন নিরাপদ অবস্থায় পৌঁছে যাবে, তখন আল্লাহকে স্মরণ করো, যিনি তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন যা তোমরা আগে জানাতে না।

২৪০. আর যারা তোমাদের মধ্য হতে মৃত্যুবরণ করে এবং স্ত্রী রেখে যায়, তাদের জন্য এটা লিখিত আছে যে তারা নিজেদের স্ত্রীর ভরণপোষণের ব্যবস্থা করবে এক বছর পর্যন্ত, যাতে তাদেরকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া না হয়। তবে যদি তারা নিজেরা চলে যেতে চায়, তবে তাদের সম্পর্কে যা কিছু প্রথানুযায়ী করা হয়, তাতে তোমাদের কোনো দোষ নেই। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

২৪১. আর তালাকপ্রাপ্তা নারীদের জন্য প্রথা অনুযায়ী ভরণপোষণ নির্ধারিত রয়েছে। এটা মুত্তাকীদের জন্য এক কর্তব্য।

২৪২. এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর নিদর্শনসমূহ স্পষ্ট করে দেন, যাতে তোমরা বুদ্ধি ব্যবহার কর।

২৪৩. তুমি কি তাদের কথা চিন্তা করনি, যারা নিজেদের ঘর ছেড়ে হাজার হাজার হয়ে মৃত্যুভয়ে বেরিয়ে পড়েছিল? তখন আল্লাহ তাদের বললেন: “মরো।” অতঃপর তিনি তাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করলেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞ নয়।

২৪৪. আর তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো এবং জেনে রাখো, আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

২৪৫. কে আছে যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেবে, যাতে আল্লাহ তা বহু গুণ বাড়িয়ে ফিরিয়ে দেন? আর আল্লাহই দেন দারিদ্র্য এবং দেন প্রাচুর্য। আর তোমাদেরকেই তাঁর দিকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।

২৪৬. তুমি কি দেখনি মূসার পরবর্তী এক সম্প্রদায়কে, যারা নিজেদের নবীকে বলেছিল: “আমাদের জন্য এক রাজা নিযুক্ত কর, যাতে আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে পারি।” তিনি বললেন: “যদি তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরজ করা হয়, তবে কি তোমরা যুদ্ধ থেকে বিরত থাকবে না?” তারা বলল: “আমাদের কী হয়েছে যে আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করব না, যখন আমাদেরকে আমাদের ঘর থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে এবং আমাদের সন্তানদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে?” অথচ যখন তাদের উপর যুদ্ধ ফরজ করা হলো, তখন অল্প কয়েকজন ছাড়া তারা সবাই মুখ ফিরিয়ে নিল। আর আল্লাহ জালিমদের ভালোবাসেন না।

২৪৭. তাদের নবী বললেন: “আল্লাহ তোমাদের জন্য তালূতকে রাজা নিযুক্ত করেছেন।” তারা বলল: “সে কীভাবে আমাদের রাজত্ব করবে, অথচ আমরা তার চেয়ে রাজত্বের অধিক উপযুক্ত? আর তার তো যথেষ্ট সম্পদও নেই।” তিনি বললেন: “আল্লাহ তাকে তোমাদের উপর নির্বাচন করেছেন এবং তাকে জ্ঞান ও শরীরে প্রাচুর্য দান করেছেন। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা, তাঁকেই তাঁর রাজত্ব দান করেন। আল্লাহ সর্ববিস্তৃত, সর্বজ্ঞ।”

২৪৮. আর তাদের নবী বললেন: “তার রাজত্বের নিদর্শন এই যে, তোমাদের কাছে আসবে তাবূত (সিন্দুক), যাতে থাকবে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে শান্তি এবং মূসা ও হারূনের পরিবারের রেখে যাওয়া কিছু জিনিস। ফেরেশতাগণ তা বহন করে আনবে। এতে তোমাদের জন্য এক নিদর্শন রয়েছে, যদি তোমরা ঈমানদার হও।”

২৪৯. যখন তালূত সৈন্যবাহিনী নিয়ে রওনা হলো, তখন তিনি বললেন: “আল্লাহ তোমাদেরকে এক নদীর মাধ্যমে পরীক্ষা করবেন। যে এতে থেকে পান করবে, সে আমার সঙ্গী নয়। আর যে তা থেকে কিছুই স্বাদ নেবে না, সে আমার সঙ্গী। তবে হাতের তালুতে নিয়ে এক চুমুক পান করলে ক্ষতি নেই।” অতঃপর তারা সবাই তা থেকে পান করল, অল্প কয়েকজন ছাড়া। পরে যখন তালূত ও তার সঙ্গে ঈমানদাররা নদী পার হলো, তারা বলল: “আজ আমাদের পক্ষে জালুত (ইসরাইলীয়দের বিরুদ্ধে সেনাপতি) ও তার সৈন্যদের মোকাবিলা করার শক্তি নেই।” কিন্তু যারা দৃঢ়বিশ্বাসী ছিল তারা বলল: “কত ক্ষুদ্র দল আছে, যারা আল্লাহর অনুমতিতে বৃহৎ দলকে পরাজিত করেছে! আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গেই আছেন।”

২৫০. এবং যখন তারা জালূত ও তার সৈন্যদের সামনে উপস্থিত হলো, তখন বলল: “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের উপর ধৈর্যের ধারা বর্ষণ করো, আমাদের পদক্ষেপ দৃঢ় করো এবং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য দাও।”

২৫১. অতঃপর তারা আল্লাহর অনুমতিতে শত্রুদের পরাজিত করল। আর দাউদ জালূতকে হত্যা করল। এবং আল্লাহ তাকে রাজত্ব ও প্রজ্ঞা দান করলেন এবং যা ইচ্ছা শিখিয়ে দিলেন। আর যদি আল্লাহ মানুষের একদলকে অন্য দলের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তবে পৃথিবী ভরে যেত বিপর্যয়ে। কিন্তু আল্লাহ সমগ্র বিশ্বের প্রতি অনুগ্রহশীল।

২৫২. এগুলো আল্লাহর নিদর্শন, যা আমরা সত্যসহ তোমার কাছে পাঠ করি। আর তুমি অবশ্যই রাসূলদের একজন।

২৫৩. আমি রাসূলদের একে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। তাদের মধ্যে কেউ আছেন, যাঁর সঙ্গে আল্লাহ কথা বলেছেন, আবার কারো মর্যাদা তিনি আরও উচ্চ করেছেন। আমি মরিয়মপুত্র ঈসাকে সুস্পষ্ট নিদর্শন দান করেছি এবং তাঁকে সমর্থন করেছি পবিত্র আত্মা দ্বারা। আর যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে তাদের পর যারা এসেছিল তারা পরস্পর যুদ্ধ করত না, যখন তাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শন এসেছিল; কিন্তু তারা মতভেদে লিপ্ত হলো—কেউ ঈমান আনল, আর কেউ অবিশ্বাস করল। আর যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে তারা যুদ্ধ করত না। কিন্তু আল্লাহ যা ইচ্ছা, তাই করেন।

২৫৪. হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদের যা রিজিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করো, সেই দিনের আগেই যেদিন কোনো ক্রয়-বিক্রয়, কোনো বন্ধুত্ব কিংবা সুপারিশ কাজে আসবে না। আর কাফিরেরাই জালিম।

২৫৫. আল্লাহ—তাঁকে ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রা স্পর্শ করে না, নিদ্রাও নয়। আসমানসমূহে ও জমিনে যা কিছু আছে, সবই তাঁর। কে আছে যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করতে পারে? তিনি জানেন যা তাদের সামনে আছে এবং যা তাদের পেছনে আছে। আর তারা তাঁর জ্ঞান থেকে কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন ছাড়া। তাঁর কুরসি আসমান ও জমিনকে পরিব্যাপ্ত করে আছে, আর এগুলো রক্ষা করা তাঁর জন্য কোনো কঠিন নয়। তিনি মহান, সর্বোচ্চ।

২৫৬. দ্বীনে কোনো জবরদস্তি নেই। সৎপথ ভ্রান্তি থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে। সুতরাং যে কেউ তাগূত (মিথ্যা উপাস্য)কে অস্বীকার করে এবং আল্লাহতে ঈমান আনে, সে ধরে নিয়েছে সবচেয়ে মজবুত হাতল, যা কখনো ভাঙবে না। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

২৫৭. আল্লাহ তাঁদের অভিভাবক, যারা ঈমান এনেছে। তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন। আর যারা কাফির, তাদের অভিভাবক হলো তাগূত। তারা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। তারাই জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে।

২৫৮. তুমি কি সেই ব্যক্তির কথা লক্ষ্য করনি, যে তার প্রতিপালকের ব্যাপারে ইবরাহিমের সাথে তর্কে লিপ্ত হয়েছিল, কারণ আল্লাহ তাকে রাজত্ব দান করেছিলেন? যখন ইবরাহিম বললেন: “আমার প্রতিপালক তিনিই, যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান।” সে বলল: “আমিও জীবন দিই ও মৃত্যু ঘটাই।” ইবরাহিম বললেন: “নিশ্চয়ই আল্লাহ সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে উদিত করেন, তুমি তা পশ্চিম দিক থেকে উদিত করো।” তখন সে কাফির স্তম্ভিত হয়ে গেল। আর আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।

২৫৯. অথবা তুমি কি সেই ব্যক্তির কথা লক্ষ্য করনি, যে এক ধ্বংসপ্রাপ্ত জনপদ অতিক্রম করছিল? সে বলল: “আল্লাহ কীভাবে এই জনপদকে মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করবেন?” তখন আল্লাহ তাকে একশ বছর পর্যন্ত মৃত্যুর অবস্থায় রাখলেন; তারপর তাঁকে জীবিত করলেন। তিনি বললেন: “তুমি কতকাল এ অবস্থায় ছিলে?” সে বলল: “এক দিন কিংবা অর্ধেক দিন।” তিনি বললেন: “না, বরং তুমি একশ বছর ছিলে। এখন দেখো তোমার খাদ্য ও পানীয়—এগুলো পরিবর্তিত হয়নি। আর তোমার গাধাটির দিকে তাকাও, যাতে আমি তোমাকে মানুষের জন্য নিদর্শন করি। আর হাড়গুলোর দিকে তাকাও, কীভাবে আমি এগুলো জোড়া লাগাই, তারপর মাংস দিয়ে ঢেকে দিই।” যখন তার কাছে বিষয়টি সুস্পষ্ট হলো, তখন সে বলল: “আমি জানি যে আল্লাহ সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান।”

২৬০. এবং যখন ইবরাহিম বললেন: “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দেখাও, তুমি কীভাবে মৃতকে জীবিত করো।” আল্লাহ বললেন: “তুমি কি বিশ্বাস করোনি?” সে বলল: “অবশ্যই করেছি, তবে আমার হৃদয়কে প্রশান্ত করার জন্য।” তিনি বললেন: “তাহলে চারটি পাখি নাও এবং তাদেরকে তোমার কাছে অনুগত করো। তারপর তাদের একটি অংশ প্রতিটি পাহাড়ের উপর রাখো। অতঃপর তাদের ডাকো, তারা তোমার কাছে ছুটে আসবে। আর জেনে রাখো, আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”

২৬১. যারা নিজেদের সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের দৃষ্টান্ত হলো একটি শস্যদানা, যা থেকে উৎপন্ন হয় সাতটি শীষ; প্রতিটি শীষে থাকে একশো দানা। আর আল্লাহ যাকে চান, তাঁর জন্য তা বহু গুণ বৃদ্ধি করেন। আল্লাহ সর্ববিস্তৃত, সর্বজ্ঞ।

২৬২. যারা নিজেদের সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তারপর যা ব্যয় করেছে তার কথা মনে করিয়ে দেয় না এবং কষ্টও দেয় না—তাদের প্রতিদান তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে। তাদের উপর কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।

২৬৩. সদয় কথা এবং ক্ষমা প্রদর্শন সেই দান থেকে উত্তম, যা পরবর্তী অপমানের সঙ্গে মিশে যায়। আল্লাহ অভাবমুক্ত, সহনশীল।

২৬৪. হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের দানকে এমনভাবে নষ্ট করো না যে, পরে তা মনে করিয়ে দেওয়া ও কষ্ট দেওয়ার মাধ্যমে বাতিল হয়ে যায়—যেমন একজন ব্যক্তি, যে তার সম্পদ মানুষকে দেখানোর জন্য ব্যয় করে, অথচ আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে না। তার দৃষ্টান্ত হলো একটি মসৃণ পাথর, যার উপর মাটি আছে; তাতে প্রবল বৃষ্টি পড়ে এবং তাকে একেবারে উন্মুক্ত করে ফেলে। তারা যা উপার্জন করেছে, তা থেকে কিছুই তাদের হাতে থাকবে না। আর আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে সঠিক পথে পরিচালিত করেন না।

২৬৫. কিন্তু যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে এবং নিজেদের অন্তরের স্থিরতার জন্য সম্পদ ব্যয় করে—তাদের দৃষ্টান্ত হলো একটি বাগান, যা উঁচু স্থানে অবস্থিত। সেখানে প্রবল বৃষ্টি হলে দ্বিগুণ ফল দেয়; আর যদি প্রবল বৃষ্টি না-ও হয়, তবে হালকা শিশিরও যথেষ্ট হয়। আর আল্লাহ তোমাদের কার্যাবলী সম্যক দেখেন।

২৬৬. তোমাদের কেউ কি এমনটি কামনা করে যে, তার একটি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান থাকবে, যার নিচে নদী প্রবাহিত হচ্ছে, সেখানে থাকবে নানারকম ফলমূল; আর সে বয়োবৃদ্ধ অবস্থায় থাকবে এবং তার দুর্বল সন্তানসন্ততি থাকবে, এমন সময়ে সেখানে আগুনের ঝড় বয়ে যাবে এবং তা পুড়ে যাবে? এইভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য নিদর্শনসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা কর।

২৬৭. হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের অর্জিত পবিত্র জিনিস এবং আমি যা তোমাদের জন্য মাটি থেকে উৎপন্ন করেছি, তার উৎকৃষ্ট অংশ ব্যয় করো। আর তোমরা নিকৃষ্ট বস্তু ব্যয় করার উদ্দেশ্যে ধরো না, যা তোমরা নিজেরাও চোখ বুজে গ্রহণ করতে লজ্জাবোধ করতে। জেনে রাখো, আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসার যোগ্য।

২৬৮. শয়তান তোমাদের দারিদ্র্যের ভয় দেখায় এবং অশ্লীলতার দিকে প্রলুব্ধ করে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের প্রতিশ্রুতি দেন ক্ষমা ও প্রাচুর্যের। আর আল্লাহ বিস্তৃত দানশীল, সর্বজ্ঞ।

২৬৯. যাকে তিনি চান, তাকেই তিনি প্রজ্ঞা দান করেন। আর যাকে প্রজ্ঞা দেওয়া হলো, নিশ্চয়ই তাকে বিপুল কল্যাণ দেওয়া হলো। কিন্তু কেবল বুদ্ধিমানরাই শিক্ষা গ্রহণ করে।

২৭০. তোমরা যেকোনো দান করো বা কোনো মানত করো—আল্লাহ তা অবশ্যই জানেন। আর জালিমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।

২৭১. যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান করো, তবে তা ভালো। আর যদি গোপনে দাও এবং অভাবগ্রস্তদের পৌঁছে দাও, তবে তা তোমাদের জন্য উত্তম। আর তিনি তোমাদের কিছু পাপ মোচন করবেন। আল্লাহ তোমরা যা করো, সম্যক অবগত।

২৭২. তাদেরকে সৎপথে আনানো তোমার দায়িত্ব নয়। বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন তাকেই সৎপথে পরিচালিত করেন। আর তোমরা যা দান করো তা তোমাদের নিজেদের জন্যই; তোমরা যা ব্যয় করো, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টিই কামনা করো। তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে, তার পূর্ণ প্রতিদান তোমাদের দেওয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি কোনো অবিচার করা হবে না।

২৭৩. (দান করো) সেই অভাবগ্রস্তদের জন্য, যারা আল্লাহর পথে নিবেদিত এবং পৃথিবী ভ্রমণ করে জীবিকা অর্জনে অক্ষম। অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করবে, কারণ তারা লজ্জার কারণে কারও কাছে চায় না। তুমি তাদের চিহ্ন দিয়ে চিনতে পারবে—তারা মানুষের কাছে জোর করে কিছু চায় না। আর তোমরা যা কিছু সম্পদ ব্যয় করবে, আল্লাহ তা সম্যক জানেন।

২৭৪. যারা রাত-দিন, গোপনে ও প্রকাশ্যে নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের প্রতিদান তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে। তাদের জন্য কোনো ভয় নেই, আর তারা দুঃখিতও হবে না।

২৭৫. যারা সুদ খায়, তারা পুনরুত্থানের দিন দাঁড়াতে পারবে না—যেন শয়তান তাদেরকে পাগল করে ফেলে দিয়েছে। কারণ তারা বলে, “বাণিজ্য তো সুদের মতোই।” অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে বৈধ করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন। তাই যার কাছে তার প্রতিপালকের কাছ থেকে উপদেশ পৌঁছেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা করেছে তা তার জন্য, আর তার ব্যাপার আল্লাহর হাতে। কিন্তু যারা পুনরায় সুদে ফিরে যায়, তারা আগুনের মানুষ; তারা সেখানে চিরকাল থাকবে।

২৭৬. আল্লাহ সুদকে ধ্বংস করেন এবং দানের ওপর বরকত বৃদ্ধি করেন। আর আল্লাহ কোনো অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালোবাসেন না।

২৭৭. যারা ঈমান এনেছে, সৎকর্ম করেছে, নামাজ কায়েম করেছে এবং যাকাত দিয়েছে—তাদের প্রতিদান তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে। তাদের কোনো ভয় নেই, আর তারা দুঃখিতও হবে না।

২৭৮. হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং যদি তোমরা সত্যিই ঈমানদার হও তবে যা সুদ অবশিষ্ট রয়েছে, তা ছেড়ে দাও।

২৭৯. যদি তোমরা তা না করো, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সঙ্গে যুদ্ধ করার ঘোষণা শুনে নাও। কিন্তু যদি তওবা করো, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই হবে—তোমরা কারও প্রতি জুলুম করবে না এবং কারও জুলুমেরও শিকার হবে না।

২৮০. আর যদি ঋণী কষ্টে থাকে, তবে তাকে স্বচ্ছল হওয়া পর্যন্ত সময় দাও। আর যদি তোমরা ক্ষমা করে দাও, তবে সেটাই তোমাদের জন্য উত্তম—যদি তোমরা জানো।

২৮১. আর সেই দিনের ভয় করো, যেদিন তোমরা আল্লাহর কাছে ফিরে যাবে। তখন প্রত্যেক প্রাণকে তার কৃতকর্মের পূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে এবং তাদের প্রতি কোনো অবিচার করা হবে না।

২৮২. হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পরস্পরের মধ্যে ঋণ লও, তখন সেটি লিখে রাখো। তোমাদের মধ্যে একজন লেখক ন্যায়সঙ্গতভাবে লিখে দেবে, এবং লেখক যেন আল্লাহ তাকে যে শিক্ষা দিয়েছেন তা অবহেলা না করে লিখে দেয়। যার ওপর ঋণের দায় রয়েছে, সে যেন তা উচ্চারণ করে বলে দেয়—সে যেন আল্লাহকে, তার প্রতিপালককে ভয় করে এবং কিছু বাদ না দেয়। আর যদি সে অজ্ঞ, দুর্বল হয়, বা নিজে উচ্চারণ করতে না পারে, তবে তার অভিভাবক ন্যায়সঙ্গতভাবে বলে দেবে। আর তোমরা তোমাদের পুরুষদের মধ্য থেকে দুইজন সাক্ষী বানাও। আর যদি দুইজন পুরুষ না পাও, তবে একজন পুরুষ ও দুজন নারী—যাদের সাক্ষ্য তোমরা গ্রহণযোগ্য মনে করো—যাতে একজন ভুল করলে অন্যজন তাকে মনে করিয়ে দিতে পারে। সাক্ষীরা যখন ডাকা হবে তখন তারা যেন সাক্ষ্য দিতে অস্বীকার না করে। আর তোমরা ঋণ অল্প হোক বা বেশি—মেয়াদসহ সেটি লিখতে দ্বিধা করো না। এটা আল্লাহর কাছে অধিক ন্যায়সঙ্গত, সাক্ষ্যের জন্য দৃঢ়তর, এবং তোমাদের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি না করার উপায়। তবে যদি নগদ লেনদেন হয়, যা হাতে হাতে আদান-প্রদান করা হয়, তবে তা না লিখলেও দোষ নেই। আর যখন লেনদেন করো, তখন সাক্ষী রেখো। লেখক বা সাক্ষীকে ক্ষতিগ্রস্ত করা উচিত নয়, আর যদি তোমরা তা করো তবে তা তোমাদের জন্য অবাধ্যতা। আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ তোমাদের শিক্ষা দেন, আর আল্লাহ সবকিছু জানেন।

২৮৩. আর যদি তোমরা সফরে থাকো এবং লেখক না পাও, তবে জামানত নাও। আর যদি তোমাদের কেউ কারও প্রতি বিশ্বাস রাখে, তবে যাকে বিশ্বাস করা হয়েছে সে যেন আমানত ফিরিয়ে দেয় এবং তার প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করে। আর সাক্ষ্য গোপন করো না। যে কেউ সাক্ষ্য গোপন করে, তার হৃদয় অবশ্যই পাপী। আর আল্লাহ তোমাদের সকল কাজ সম্পর্কে অবগত।

২৮৪. আকাশসমূহে ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর। তোমাদের অন্তরে যা কিছু আছে—তোমরা যদি তা প্রকাশ করো বা গোপন রাখো—আল্লাহ তার হিসাব নেবেন। তারপর তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেবেন। আল্লাহ সর্বশক্তিমান, প্রজ্ঞাময়।

২৮৫. রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর প্রতিপালকের কাছে যা অবতীর্ণ হয়েছে, তাতে ঈমান এনেছেন—এমনই করেছেন মুমিনগণও। তারা সবাই আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা, তাঁর কিতাব এবং তাঁর রসূলদের প্রতি ঈমান আনে। তারা বলেন, “আমরা তাঁর রসূলদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করি না।” তারা বলেন, “আমরা শুনলাম এবং মানি। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ক্ষমা করো। আমাদের সবশেষ ফেরত শুধুমাত্র তোমার কাছে।”

২৮৬. আল্লাহ কাউকে তার সামর্থ্যের বাইরে কোনো দায়িত্ব দেন না। মানুষের জন্য যা অর্জন করেছে তা-ই তার প্রাপ্য, আর যা মন্দ করেছে তা-ই তার বোঝা। হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা ভুল করি বা ভুলে যাই, তবে আমাদেরকে পাকড়াও কোরো না। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ওপরে তেমন বোঝা চাপিও না, যেমন তুমি আমাদের পূর্ববর্তীদের ওপরে চাপিয়েছিলে। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ওপর এমন দায়িত্ব চাপিও না যা বহন করার ক্ষমতা আমাদের নেই। আর আমাদেরকে ক্ষমা করো, আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও, আমাদের প্রতি করুণা করো। তুমি আমাদের অভিভাবক, অতএব অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করো। 0 0 0

সূরা আল-বাকারা সম্পর্কে মন্তব্য

সূরা আল-বাকারার গুরুত্ব তার গভীরতা, দিকনির্দেশনা এবং ইসলামী বিশ্বাস ও আইনসমূহের ব্যাপক সামগ্রীর মধ্যে নিহিত। এটি কুরআনের দীর্ঘতম সূরা এবং মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছিল, যাতে প্রাথমিক মুসলিম সমাজ গঠনে সহায়তা করা যায়। সূরার ২৮২ নং আয়াত কুরআনের দীর্ঘতম আয়াত হিসেবে পরিচিত।

এই সূরা বিশ্বাসের মূলনীতিগুলো স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করে, যার মধ্যে রয়েছে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, নবীদের প্রতি ঈমান, পরকালের বিশ্বাস এবং অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস। এছাড়াও এটি ইবাদত, দান, রোজা, বিবাহ, বাণিজ্য, ন্যায়বিচার এবং সামাজিক জীবন সম্পর্কে ব্যবহারিক নির্দেশনা প্রদান করে।

এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আয়াত হলো আয়াতুল কুরসি (২:২৫৫), যা আল্লাহর মহিমা ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করে এবং সুরক্ষার ও বরকতের জন্য ব্যাপকভাবে পাঠ করা হয়। সূরার শেষ দুই আয়াত (২:২৮৫–২৮৬) তাদের সৌন্দর্য এবং গভীর দোয়ার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত, যা মানসিক শান্তি এবং আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি সংযোগ প্রদান করে।

সূরা আল-বাকারা ঔদ্ধত্য থেকে সতর্ক করে, অবিশ্বাসের ফলাফলের কথা স্মরণ করায়, এবং পূর্ববর্তী নবী ও জাতিগুলোর জীবনের শিক্ষা উপস্থাপন করে।

বিশেষভাবে, নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের বাড়িতে সূরা আল-বাকারার পাঠ করে, তার ঘর থেকে শয়তান দূরে থাকে। এটি সুরক্ষা, প্রজ্ঞা এবং বরকতের এক ঢাল হিসেবে বিবেচিত। সংক্ষেপে, সূরা আল-বাকারা হলো একটি আধ্যাত্মিক, নৈতিক, আইনি ও সামাজিক গাইড যা প্রতিটি মুসলিমকে বোঝা এবং মনন করা উচিৎ। 0 0 0

আল-বাকারা (গাভী): প্রশ্নোত্তর

আল-বাকারা (গাভী) কী?

উঃ আল-বাকারা (গাভী) কুরআনের দ্বিতীয় সূরা, যা সবচেয়ে দীর্ঘসূত্র সূরা হিসেবে পরিচিত এবং এতে ২৮৬টি আয়াত রয়েছে।

আল-বাকারা (গাভী) কে কোন নামে পরিচিত?

উঃ আল-বাকারা (গাভী) ‘গাভী’ নামে পরিচিত, কারণ সূরার আয়াতে ইস্রায়েলীয় জনগণের একটি গল্পের মাধ্যমে গাভীর উল্লেখ আছে।

আল-বাকারা (গাভী) কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে?

উঃ আল-বাকারা (গাভী) মদীনায় অবতীর্ণ হয় এবং মুসলিম সমাজকে ধর্মীয় ও সামাজিক নীতি প্রদানের উদ্দেশ্যে পাঠ করা হয়েছে।

আল-বাকারা (গাভী) এর আধ্যাত্মিক গুরুত্ব কী?

উঃ আল-বাকারা (গাভী) মুসলমানদের আধ্যাত্মিক জীবন, বিধি-বিধান এবং আল্লাহর নির্দেশনা অনুসরণের জন্য শক্তিশালী দিকনির্দেশনা দেয়।

আল-বাকারা (গাভী) কে মুসলিমদের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ বলা হয়?

উঃ আল-বাকারা (গাভী) মুসলিমদের আধ্যাত্মিক শিক্ষা, ন্যায়নীতি এবং দৈনন্দিন জীবন পরিচালনার জন্য অপরিহার্য।

Q6: আল-বাকারা (গাভী) কে কতটি আয়াত নিয়ে গঠিত?

উঃ আল-বাকারা (গাভী) ২৮৬টি আয়াত নিয়ে গঠিত, যা কুরআনের সবচেয়ে দীর্ঘ সূরা।

আল-বাকারা (গাভী) পড়ার সুবিধা কী?

উঃ আল-বাকারা (গাভী) নিয়মিত পাঠ করলে মানসিক শান্তি, আধ্যাত্মিক শক্তি এবং আল্লাহর রক্ষা প্রাপ্তি সম্ভব।

আল-বাকারা (গাভী) কে কোন ধরনের নির্দেশিকা প্রদান করে?

উঃ আল-বাকারা (গাভী) ধর্ম, ন্যায়নীতি, অর্থনৈতিক ও সামাজিক আচরণ এবং বিশ্বাসীদের আধ্যাত্মিক জীবন পরিচালনার জন্য পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা দেয়।

আল-বাকারা (গাভী) কে প্রতিদিনের নামাজে পড়া কি আবশ্যক?

উঃ আল-বাকারা (গাভী) সম্পূর্ণ সূরা নয় নামাজে প্রতিদিন পড়া আবশ্যক নয়, তবে কিছু আয়াত বিশেষভাবে সূরার শেষ অংশ (আয়াতুল কুরসি) প্রতিদিনের নামাজে পড়া অত্যন্ত সুপারিশকৃত।

আল-বাকারা (গাভী) কে মুসলিম জীবনের নৈতিক শিক্ষা হিসেবে কিভাবে ব্যবহার করা যায়?

উঃ আল-বাকারা (গাভী) থেকে আমরা শিখি ন্যায়নীতি, সামাজিক দায়িত্ব এবং আল্লাহর নির্দেশনা অনুসরণের গুরুত্ব।

আল-বাকারা (গাভী) কে কুরআনের ‘নিয়মাবলী ও নির্দেশনার সূরা’ বলা যায় কেন?

উঃ আল-বাকারা (গাভী) ধর্মীয় বিধি, সামাজিক নীতি, নৈতিকতা এবং আধ্যাত্মিক চেতনা প্রদানের জন্য সম্পূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করে।

আল-বাকারা (গাভী) কে ‘রক্ষা ও আশীর্বাদের সূরা’ বলা হয় কেন?

উঃ আল-বাকারা (গাভী) নিয়মিত পাঠ করলে শয়তান থেকে নিরাপত্তা, আল্লাহর রহমত এবং জীবনে শান্তি প্রাপ্তি সম্ভব।

আল-বাকারা (গাভী) কে শিশুদের জন্য কিভাবে শেখানো যায়?

উঃ আল-বাকারা (গাভী) শিশুদের সহজভাবে আয়াতের অর্থ বোঝানো, গল্পের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া এবং নামাজে প্রয়োগ শেখানো যায়।

আল-বাকারা (গাভী) কে আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য কিভাবে ব্যবহার করা যায়?

উঃ আল-বাকারা (গাভী) নিয়মিত পাঠ, ধ্যান এবং অর্থ বোঝার মাধ্যমে আত্মার শান্তি এবং আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধি পায়।

আল-বাকারা (গাভী) পাঠের মাধ্যমে কী অর্জিত হয়?

উঃ আল-বাকারা (গাভী) পাঠের মাধ্যমে বিশ্বাসী আধ্যাত্মিক শান্তি, আল্লাহর নির্দেশনা অনুসরণ, নৈতিক জীবন এবং দৈনন্দিন সমস্যার সমাধান পেতে পারে। 0 0 0

সূরা আল-বাকারা (গাভী) – মূল বিষয়সমূহ

সূরা আল-বাকারা (গাভী) কুরআনের দ্বিতীয় সূরা এবং সবচেয়ে দীর্ঘসূত্র সূরা। এটি ২৮৬টি আয়াত নিয়ে গঠিত এবং মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে। সূরাটি মুসলমানদের আধ্যাত্মিক, নৈতিক এবং সামাজিক জীবনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করে।

  • বিশ্বাস ও ঈমান:
    সূরায় আল্লাহর একত্ব, নবীদের প্রতি বিশ্বাস এবং আধ্যাত্মিক দিক থেকে ঈমানের গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
  • নিয়মাবলী ও আইন:
    জীবনের নৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় আচরণের জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশাবলী প্রদান করা হয়েছে। এতে খাদ্য, অর্থনীতি, বিবাহ-বিচ্ছেদ, কর্পোরেট ও সামাজিক দায়িত্ব সম্পর্কিত বিধানও অন্তর্ভুক্ত।
  • পূর্ববর্তী জাতির কাহিনী:
    অতীতের উম্মতদের উদাহরণ এবং শিক্ষণীয় ঘটনা যেমন গাভীর কাহিনী উল্লেখ করা হয়েছে, যা থেকে মানুষ শিক্ষা নিতে পারে।
  • প্রার্থনা ও উপাসনা:
    সূরায় আল্লাহর প্রতি ভক্তি, প্রার্থনা এবং সৎ পথে পরিচালনার গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
  • নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব:
    সততা, ন্যায়পরায়ণতা, সহানুভূতি এবং অন্যের প্রতি সদাচরণ শেখানো হয়েছে।
  • আধ্যাত্মিক গুরুত্ব:
  1. আধ্যাত্মিক শান্তি এবং আত্মার সমৃদ্ধি প্রদান করে।
  2. নিয়মিত পাঠের মাধ্যমে শয়তান থেকে রক্ষা এবং আল্লাহর রহমত লাভ সম্ভব।
  • প্রায়োগিক শিক্ষা:
  1. মুসলিমদের দৈনন্দিন জীবন ও নামাজে নির্দেশিত।
  2. নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালন এবং সৎ পথ অনুসরণের জন্য দিকনির্দেশনা প্রদান করে।

সূরা আল-বাকারা (গাভী) কেবল আধ্যাত্মিক পাঠ নয়, এটি জীবনের নৈতিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা প্রদান করে। পাঠের মাধ্যমে একজন মুসলিম জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশনা অনুসরণ করতে পারে এবং পূর্ণাঙ্গ জীবনযাপন করতে সক্ষম হয়। 0 0 0

উপসংহার

সূরা আল-বাকারা (গাভী) বিশ্বাস ও ঈমানকে প্রধান শিক্ষা হিসেবে তুলে ধরে। সূরা আল-বাকারা (গাভী) এ আল্লাহর একত্ব, নবী এবং পরলৌকিক জীবনের প্রতি বিশ্বাসের গুরুত্ব প্রকাশ পেয়েছে। সূরা আল-বাকারা (গাভী) ধর্মীয় বিধি ও নৈতিক নিয়মাবলী সমৃদ্ধ। সূরা আল-বাকারা (গাভী) মুসলিমদের নামাজ, রোজা, যাকাত এবং সামাজিক দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়। সূরা আল-বাকারা (গাভী) অতীত উম্মতের গল্প যেমন গাভীর কাহিনী মাধ্যমে শিক্ষণীয় উদাহরণ প্রদান করে। সূরা আল-বাকারা (গাভী) নৈতিক শিক্ষা এবং সামাজিক দায়িত্ব শেখায়। সূরা আল-বাকারা (গাভী) সততা, ন্যায়পরায়ণতা, সহানুভূতি এবং দায়িত্ববোধের শিক্ষা দেয়। সূরা আল-বাকারা (গাভী) প্রার্থনা এবং আল্লাহর নির্দেশনা চাওয়ার গুরুত্বের ওপর জোর দেয়। সূরা আল-বাকারা (গাভী) আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পাঠের সুপারিশ দেয়। সূরা আল-বাকারা (গাভী) মুসলিমদের আধ্যাত্মিক শান্তি ও আত্মার সমৃদ্ধি প্রদান করে। সূরা আল-বাকারা (গাভী) জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সৎ পথ অনুসরণের দিকনির্দেশনা দেয়। সূরা আল-বাকারা (গাভী) ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে সামাজিক ন্যায় এবং দায়িত্বের সংযোগ স্থাপন করে। সূরা আল-বাকারা (গাভী) অর্থনৈতিক ও সামাজিক আচরণের নিয়মাবলীও স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। সূরা আল-বাকারা (গাভী) ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে ন্যায়, সততা এবং সৎপথ নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ। সূরা আল-বাকারা (গাভী) মুসলিমদের আধ্যাত্মিক এবং নৈতিক জীবনের পূর্ণাঙ্গ নির্দেশিকা। সূরা আল-বাকারা (গাভী) জীবন পরিচালনার জন্য আদর্শ মানদণ্ড সরবরাহ করে। সূরা আল-বাকারা (Al-Baqara) পাঠ করে মুসলিমরা আল্লাহর নির্দেশনা অনুসরণ করে। সূরা আল-বাকারা (গাভী) আধ্যাত্মিক শক্তি, ধৈর্য এবং স্থিরতা বৃদ্ধি করে। সূরা আল-বাকারা (গাভী) নৈতিক ও আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করে। সূরা আল-বাকারা (গাভী) মুসলিমদের দৈনন্দিন জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দিকনির্দেশনা দেয়। সূরা আল-বাকারা (গাভী) ধর্ম, আধ্যাত্মিকতা এবং নৈতিকতার সমন্বয় প্রকাশ করে। সূরা আল-বাকারা (গাভী) মুসলিমদের জন্য আল্লাহর নির্দেশনা ও রহমতের উৎস। সূরা আল-বাকারা (গাভী) আধ্যাত্মিক শান্তি এবং মনোবল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। সূরা আল-বাকারা (গাভী) জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সৎ এবং ন্যায়পরায়ণ আচরণের শিক্ষা দেয়। সূরা আল-বাকারা (গাভী) মুসলিমরা অনুশীলন করলে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ করে। সূরা আল-বাকারা নামাজ, ইবাদত এবং দৈনন্দিন জীবন পরিচালনার জন্য অপরিহার্য। শেষ পর্যন্ত, সূরা আল-বাকারা (গাভী) মুসলিমদের আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও সামাজিক জীবনের মূল ভিত্তি এবং পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনার উৎস। 0 0 0

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আমরা আশা করি আপনি এই নিবন্ধে সূরা আল-বাকারা (গাভী) সম্পর্কিত তথ্য উপভোগ করেছেন। সূরা আল-বাকারা আমাদের জীবনের আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও সামাজিক দিকনির্দেশনা দেয়। আমরা আপনার মতামত জানতে আগ্রহী—আপনি কি মনে করেন সূরা আল-বাকারা পাঠ ও শেখার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক ও নৈতিক শিক্ষা যথাযথভাবে প্রয়োগ করা যায়? আপনার মন্তব্য আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সূরা আল-বাকারা  সম্পর্কিত পাঠ ও আলোচনা আরও উন্নত করার সুযোগ দেয়। দয়া করে জানান, আপনি সূরা আল-বাকারা  নিয়ে এই নিবন্ধটি কতটা সহায়ক মনে করেছেন। আমরা চাই, আমাদের পাঠকরা সূরা আল-বাকারা  সম্পর্কে আরও সচেতন হোন এবং এটি আধ্যাত্মিক ও নৈতিক জীবনে প্রয়োগ করুন। আপনার মতামত, প্রশ্ন বা পরামর্শ দিয়ে আমাদের জানান।