পবিত্র কুরআনের ৯৩তম সূরা আদ-দুহা (সকালের উজ্জ্বলতা) এর অনুপ্রেরণামূলক বার্তা অনুভব করুন—একটি শক্তিশালী সূরা, যা আলো অনুসন্ধানী প্রতিটি হৃদয়ে আশা, সান্ত্বনা ও আল্লাহর আশ্বাস বয়ে আনে।
সূরা ৯৩: আদ-দুহা (সকালের উজ্জ্বলতা)
ভূমিকা
সূরা আদ-দুহা পবিত্র কুরআনের ৯৩তম সূরা, যা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছিল। এতে এগারোটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু সান্ত্বনাদায়ক আয়াত রয়েছে, যা নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে সেই সময় আশ্বস্ত করে যখন ওহী সাময়িকভাবে থেমে গিয়েছিল। সূরাটি সকালের আলো এবং রাতের শপথের মাধ্যমে শুরু হয়, যা যথাক্রমে আশা এবং অন্ধকারের প্রতীক। এটি ঘোষণা করে যে আল্লাহ নবীকে পরিত্যাগ করেননি এবং তাঁর প্রতি অসন্তুষ্টও নন। বরং, পরকালের প্রতি এই বর্তমান জীবনের চেয়ে উত্তম পুরস্কার রয়েছে। সূরাটি নবীর প্রতি আল্লাহর যত্নের কথা স্মরণ করে, তিনি কীভাবে এতিম অবস্থায় আশ্রয় দিয়েছিলেন, হারিয়ে গেলে পথ দেখিয়েছিলেন এবং প্রয়োজনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা দিয়েছিলেন। এতিম ও অভাবীদের প্রতি দয়া প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়ে এবং নবীকে তাঁর প্রভুর আশীর্বাদ ঘোষণা করতে উৎসাহিত করে এটি শেষ হয়।
সূরা ৯৩: আদ-দুহা – (সকালের উজ্জ্বলতা): পাঠ্য
পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে।
(১) সকালের দীপ্তির শপথ,
(২) আর রাতের শপথ, যখন তা অন্ধকারে ঢেকে যায়,
(৩) তোমার প্রতিপালক তোমাকে ত্যাগ করেননি এবং অসন্তুষ্টও হননি।
(৪) আর অবশ্যই, পরকাল তোমার জন্য প্রথম [জীবন] অপেক্ষা উত্তম।
(৫) তোমার পালনকর্তা তোমাকে দান করবেন, অতঃপর তুমি সন্তুষ্ট হবে।
(৬) তিনি কি তোমাকে এতিম অবস্থায় পাননি এবং আশ্রয় দেননি?
(৭) তিনি তোমাকে পথভ্রষ্ট অবস্থায় পেয়েছেন এবং পথ দেখিয়েছেন।
(৮) তিনি তোমাকে অভাবগ্রস্ত অবস্থায় পেয়েছিলেন এবং [তোমাকে] স্বাবলম্বী করে তুলেছিলেন।
(9) অতএব, এতিমের উপর অত্যাচার করো না।
(১০) আর যে আবেদনকারী, তাকে তিরস্কার করো না।
(১১) কিন্তু তোমার প্রভুর অনুগ্রহের কথা বল। ০ ০ ০
আদ-দুহা: মন্তব্য
এই সূরা গভীর মানসিক সান্ত্বনা এবং আধ্যাত্মিক উৎসাহ প্রদান করে। এটি তুলে ধরে যে, কষ্টের সময় অথবা ঐশ্বরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে আপাত নীরবতা আল্লাহর পরিত্যাগের লক্ষণ নয়। বরং, এগুলি আল্লাহর পরিকল্পনার উপর আস্থা রাখার এবং বৃহত্তর সাফল্যের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ। নবীকে তাঁর নিজের জীবনের যাত্রা – এতিমত্ব, প্রয়োজন থেকে নির্দেশনা এবং পর্যাপ্ততা – স্মরণ করিয়ে দিয়ে সূরাটি সকল পরিস্থিতিতে আল্লাহর করুণা এবং সহায়তার উপর জোর দেয়। এতিম এবং অভাবীদের যত্ন নেওয়ার নির্দেশাবলী ঈমানের একটি অপরিহার্য অংশ হিসাবে সামাজিক দায়িত্বের উপর জোর দেয়। আল্লাহর অনুগ্রহের কথা জানানো কৃতজ্ঞতা এবং বিশ্বাসীদের জন্য সেই আশীর্বাদগুলির স্মরণ করিয়ে দেয় যা তারা প্রায়শই হালকাভাবে নেয়। এই সূরা বিশ্বাসীদের আশা ধরে রাখতে এবং আল্লাহর ক্রমাগত যত্নের নিশ্চয়তা দিয়ে বিশ্বাসে অবিচল থাকতে উৎসাহিত করে। 0 0 0
সূরা আদ-দুহা সম্পর্কিত প্রায়শ জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
প্রশ্ন ১. সূরা ৯৩: আদ-দুহা (সকালের উজ্জ্বলতা) কী সম্পর্কে?
উত্তর: সূরাটি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি আল্লাহর আশ্বাস সম্পর্কে, তাঁকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে তিনি তাঁকে পরিত্যাগ করেননি এবং আশা ও নির্দেশনা সর্বদা কষ্টের পরে আসবে।
প্রশ্ন ২. সূরা আদ-দুহা (সকালের উজ্জ্বলতা) কেন গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: সূরা আদ-দুহা (সকালের উজ্জ্বলতা) গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি বিশ্বাস, আশা এবং আশাবাদ জাগিয়ে তোলে, বিশ্বাসীদের শিক্ষা দেয় যে আল্লাহর রহমত অবিরাম এবং প্রতিটি অসুবিধার পরেই স্বস্তি আসে।
প্রশ্ন ৩. সূরাটিতে কয়টি আয়াত আছে?
উত্তর: সূরা আদ-দুহা (সকালের উজ্জ্বলতা) এ ১১টি আয়াত রয়েছে, যার প্রতিটি আয়াত নবী এবং সকল বিশ্বাসীদের জন্য সান্ত্বনা, ঐশ্বরিক ভালোবাসা এবং আশ্বাসের বার্তা বহন করে।
প্রশ্ন ৪. সূরা আদ-দুহা থেকে আমরা কী শিক্ষা পেতে পারি?
উত্তর: সূরা আদ-দুহা থেকে আমরা শিখি যে, আল্লাহ কখনও তাঁর বান্দাদের পরিত্যাগ করেন না, কৃতজ্ঞতা ও দয়া আশীর্বাদ বয়ে আনে এবং ঈমানের সাথে সর্বদা এতিম ও দরিদ্রদের প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত।
প্রশ্ন ৫. সূরা আদ-দুহা (সকালের উজ্জ্বলতা) কখন নাযিল হয়েছিল?
উত্তর: সূরাটি মক্কায় নাযিল হয়েছিল, এমন এক সময়ে যখন নবী (সাঃ) ওহীর বিরতি অনুভব করেছিলেন, যা তাকে সান্ত্বনা দিয়েছিল এবং আল্লাহর নৈকট্যকে পুনরায় নিশ্চিত করেছিল।
প্রশ্ন ৬. সূরাটি তেলাওয়াত একজন মুমিনের জন্য কীভাবে উপকারী হতে পারে?
উত্তর: সূরা আদ-দুহা (সকালের উজ্জ্বলতা) তেলাওয়াত একজন মুমিনের হৃদয়ে প্রশান্তি এনে দেয়, কঠিন সময়ে আশা বৃদ্ধি করে এবং আল্লাহর অবিরাম উপস্থিতি এবং নির্দেশনার উপর আস্থা জোরদার করে। ০ ০ ০






