Home Bengali সূরা ৯৭: আল-কদর (কদরের রাত)

সূরা ৯৭: আল-কদর (কদরের রাত)

0

পবিত্র কুরআনের ৯৭তম সূরা আল-কদর (শক্তির রজনী) এর জীবন-পরিবর্তনকারী প্রজ্ঞা উন্মোচন করুন—একটি মহিমান্বিত সূরা, যা আল্লাহর দয়া, ক্ষমা ও ঈমানদারদের জন্য চিরন্তন পুরস্কারে ভরপুর সেই পবিত্র রাতের মহিমা উদযাপন করে।

আল-কদর

সূরা ৯৭: আল-কদর (কদরের রাত)

ভূমিকা

সূরা আল-কদর পবিত্র কুরআনের ৯৭তম সূরা, যা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এতে পাঁচটি সংক্ষিপ্ত আয়াত রয়েছে যা সম্পূর্ণরূপে “কদরের রাত” ( লাইলাতুল কদর ) এর তাৎপর্যের উপর আলোকপাত করে। এই রাতকে কুরআন প্রথম নাজিল হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং এটি অপরিসীম আধ্যাত্মিক শক্তি এবং আশীর্বাদ বহন করে। সূরাটি জোর দিয়ে বলে যে এই রাতটি এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম, অর্থাৎ এই রাতে সম্পাদিত ইবাদত এবং আমল তিয়াশি বছরেরও বেশি সওয়াব বহন করে। এটি ঐশ্বরিক কার্য সম্পাদনের জন্য আল্লাহর অনুমতিক্রমে ফেরেশতা এবং রূহ (সাধারণত ফেরেশতা জিব্রাইল হিসাবে বোঝা যায়) এর অবতরণ বর্ণনা করে। সূরাটি ফজর পর্যন্ত রাতের শান্তি ও প্রশান্তি ঘোষণা করে শেষ হয়। 0 0 0

সূরা ৯৭: আল-কদর (কদরের রাত): পাঠ্য

পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে।

(১) নিঃসন্দেহে আমরা এটি কদরের রাতে নাযিল করেছি।

(২) আর তুমি কি জানো কদরের রাত কী?

(৩) কদরের রাত [ফরমানী] হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।

(৪) ফেরেশতাগণ এবং রূহ তাদের পালনকর্তার অনুমতিক্রমে প্রত্যেক কাজের জন্য তাতে অবতীর্ণ হন।

(৫) শান্তি, ভোরের উদয় পর্যন্ত। ০ ০ ০

মন্তব্য

সূরা আল-কদর ইসলামে কদরের গভীর গুরুত্ব তুলে ধরে। এটি এমন একটি সময় যখন বিশ্বাসীদের উপর ঐশ্বরিক রহমত ও আশীর্বাদ প্রচুর পরিমাণে বর্ষিত হয়। এই রাতকে “হাজার মাসের চেয়েও উত্তম” উল্লেখ করা মুমিনদেরকে প্রার্থনা, চিন্তাভাবনা এবং ইবাদতের মাধ্যমে এই বিশেষ সময়টি অন্বেষণ করার আহ্বান জানায়, কারণ তারা জানে যে তাদের প্রচেষ্টা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। ফেরেশতা এবং রূহের অবতরণ মহাবিশ্বের বিষয়গুলি পরিচালনা এবং বিশ্বাসীদের আধ্যাত্মিকভাবে সহায়তা করার ক্ষেত্রে স্বর্গীয় সত্তাদের সক্রিয় ভূমিকাকে নির্দেশ করে। রাতের শান্তিপূর্ণ প্রকৃতি এটি পালনকারীদের দ্বারা অনুভূত প্রশান্তি এবং ঐশ্বরিক উপস্থিতিকে প্রতিফলিত করে। এই সূরা মুসলমানদেরকে আধ্যাত্মিক পুনর্নবীকরণ এবং আল্লাহর নৈকট্যের জন্য একটি বিরল সুযোগ হিসাবে এই পবিত্র রাতকে মূল্য দিতে এবং অনুসরণ করতে উৎসাহিত করে। 0 0 0

You May Like: সূরা ৯১: আশ-শামস (সূর্য)

সূরা আল-কদর সম্পর্কে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

প্রশ্ন ১. সূরা ৯৭: আল-কদর কী সম্পর্কে?
উত্তর: সূরা আল-কদর হল কদরের রাতের মাহাত্ম্য এবং আশীর্বাদ সম্পর্কে, যে রাতে পবিত্র কুরআন প্রথম নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল। এই সূরাটি তুলে ধরে যে এই এক রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম, এই পবিত্র সময়ে ইবাদতের সাথে জড়িত অপরিসীম মূল্য এবং পুরষ্কার প্রদর্শন করে। এটি আরও ব্যাখ্যা করে যে ফেরেশতারা আল্লাহর আদেশ নিয়ে অবতরণ করে, ভোর পর্যন্ত শান্তি এবং রহমত ছড়িয়ে দেয়।

প্রশ্ন ২. সূরা আল-কদর কেন তাৎপর্যপূর্ণ?
উত্তর: সূরা আল-কদর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি কুরআন নাজিলের মাধ্যমে ঐশ্বরিক নির্দেশনার সূচনা করে, যা মানব ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করে। সূরাটি কদরের রাতের অসাধারণ আধ্যাত্মিক মূল্যের উপর জোর দেয়, বিশ্বাসীদের মনে করিয়ে দেয় যে এই রাতে আন্তরিক প্রার্থনা, দান এবং ইবাদত হাজার মাস ধরে অবিরাম ইবাদতের চেয়েও বেশি ফলপ্রসূ। এই সূরাটি মুসলমানদের রমজানের শেষ দশ রাতে ক্ষমা, রহমত এবং আশীর্বাদ কামনা করতে অনুপ্রাণিত করে।

প্রশ্ন ৩. সূরা আল-কদরে কতটি আয়াত আছে?
উত্তর: সূরা আল-কদরে ৫টি ছোট কিন্তু গভীর অর্থবহ আয়াত রয়েছে। সংক্ষিপ্ত হওয়া সত্ত্বেও, এটি ঐশ্বরিক ওহীর মূল্য, আল্লাহর রহমতকে স্বীকৃতি দেওয়ার গুরুত্ব এবং পবিত্র কদরের রাতে ইবাদতের পুরস্কার সম্পর্কে গভীর শিক্ষা প্রদান করে। প্রতিটি আয়াত আল্লাহর রহমত, আধ্যাত্মিক সুযোগ এবং মুমিনের জন্য শান্তির বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে তৈরি।

প্রশ্ন ৪. সূরা আল কদর থেকে আমরা কী কী শিক্ষা পেতে পারি?
উত্তর: সূরা আল কদর আমাদের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়: আল্লাহর রহমত বিশাল, নির্দেশনা কেবল তাঁর ইচ্ছার মাধ্যমেই আসে এবং আন্তরিক বিশ্বাস ও ইবাদতের এক মুহূর্ত বছরের পর বছর অবহেলার চেয়েও বেশি কিছু করতে পারে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে কুরআন হল জ্ঞানার্জনের চূড়ান্ত উৎস, এবং বিশ্বাসীদের উচিত ভক্তির সময় আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা। সূরাটি মুসলমানদের রমজানের শেষ দশ রাতে নিজেদের উৎসর্গ করতে, ক্ষমার জন্য প্রচেষ্টা করতে এবং বিশ্বাস ও সৎকর্মের উপর ভিত্তি করে জীবন গড়ে তুলতে উৎসাহিত করে।

প্রশ্ন ৫. সূরা আল কদর (কদরের রাত) কখন নাযিল হয়েছিল?
উত্তর: সূরা আল কদর মক্কায় নাযিল হয়েছিল এবং এটি সেই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার কথা উল্লেখ করে যখন পবিত্র রমজান মাসে কুরআনের প্রথম আয়াতগুলি নাযিল হয়েছিল। এই সূরার নাযিল প্রাথমিক মুসলমানদের ঐশ্বরিক নির্দেশনার অতুলনীয় উপহারের কথা মনে করিয়ে দেয় এবং তাদের কুরআনকে তাদের আলো, আইন এবং রহমত হিসাবে লালন করতে উৎসাহিত করে। এই সূরাটি সমস্ত বিশ্বাসীদের মনে করিয়ে দেয় যে আল্লাহ তা’আলা অপরিসীম আশীর্বাদের জন্য বিশেষ সময় বেছে নেন।

প্রশ্ন ৬. সূরা দর তিলাওয়াত একজন মুমিনের জন্য কীভাবে উপকারী হতে পারে?
উত্তর: সূরা দর তিলাওয়াত করলে প্রচুর আধ্যাত্মিক উপকারিতা পাওয়া যায়। এটি কুরআনের গুরুত্বের প্রতি বিশ্বাস বৃদ্ধি করে, আল্লাহর রহমতের প্রতি আশা জাগায় এবং প্রতিটি রমজানে লুকিয়ে থাকা মহান সুযোগের কথা বিশ্বাসীকে মনে করিয়ে দেয়। এই সূরা তিলাওয়াত মুসলমানদের তাদের নামাজে আশাবাদী থাকতে, তাদের ইবাদতে অবিচল থাকতে এবং আল্লাহর আশীর্বাদ সম্পর্কে সচেতন থাকতে উৎসাহিত করে। এটি এই আশ্বাস দিয়ে সান্ত্বনা প্রদান করে যে আল্লাহর শান্তি তাঁর বান্দাদের উপর, বিশেষ করে ক্বদরের রাতে অবতীর্ণ হয়, যা এটিকে অভ্যন্তরীণ প্রশান্তি এবং আধ্যাত্মিক শক্তির উৎস করে তোলে। 0 0 0